বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র

usaস্টকমার্কেট ডেস্ক :

বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০১৪ সালটা ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। কারণ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বছরটিতে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ হিসেবে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিতরণ করেছে। এই অর্থ ২০১৩ সালে বিতরণ করা লভ্যাংশের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।

বহুজাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হেন্ডারসন গ্লোবাল ইনভেস্টরসের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য গত বছরের শুরুর দিকে পূর্বাভাস দিয়েছিল, জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন ও অর্থনীতিতে ধীরগতির প্রবৃদ্ধির কারণে ২০১৪ সালে বিশ্ব শেয়ারবাজারে লভ্যাংশের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ শতাংশ। কিন্তু হেন্ডারসনের এ পূর্বাভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আলোচ্য বছর শুধু মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোই বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

বেশি হারে লভ্যাংশ দেওয়ার কারণ হিসেবে হেন্ডারসন এখন বলছে, বিশ্বজুড়ে ডলারের আর্থিক মান ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠায় বেশি হারে লভ্যাংশ দিতে পেরেছে কোম্পানিগুলো। হেন্ডারসনের কর্মকর্তা অ্যালেক্স ক্রুক বলেন, আয়ের দিক দিয়ে দেখলে ২০১৪ সাল ছিল বিনিয়োগকারীদের জন্য অসাধারণ একটি বছর। তবে ২০১৫ সাল এতটা ভালো হবে না। কারণ, এক বছরে লভ্যাংশ বেশি দিলে পরের বছরে সাধারণত তা কমে আসে।

লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বেশি এগিয়ে আছে। হেন্ডারসনের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে লভ্যাংশ বিতরণ হয়েছে ৩৯ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আর ইউরোপে ২২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ১১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্যে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ১১ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার, জাপানে ৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার লভ্যাংশ বিতরণ হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বে লভ্যাংশ বিতরণের মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ শতাংশ। আশা করা হচ্ছে, লভ্যাংশ থেকে আয় বাড়ার ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি হারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। ২০১৪ সালের জন্য রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণার ফলে চলতি বছরে বিভিন্ন শেয়ারের দামের মন্দা ভাবে কিছুটা হলেও উন্নতি হবে।

জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। চলতি বছরেও উন্নত বিশ্বের জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর চেয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের কোম্পানিগুলোই কম লভ্যাংশ দেবে—ধারণা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটির। তবে গবেষণায় আরও একটি দিক উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়লেও তা ঘুরেফিরে কয়েকটি বড় কোম্পানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অর্থাৎ সব প্রতিষ্ঠান সমানভাবে লভ্যাংশ দিচ্ছে না। ২০১৪ সালে বিতরণ করা মোট লভ্যাংশের ১১ শতাংশই দিয়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। আর সবচেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেওয়া শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠান মোট লভ্যাংশের ১৮ শতাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল ভোডাফোন। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যে মোট লভ্যাংশের ২০ শতাংশ একাই দিয়েছে। অন্যান্য বড় আকারের লভ্যাংশ দাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শেল, চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক, এইচএসবিসি, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট। তবে মাইনিং বা খনিজসম্পদ উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলো টানা তৃতীয়বারের মতো এবারও লভ্যাংশ কমিয়েছে।

হেন্ডারসন গ্লোবাল ইনভেস্টরসের গবেষণাটি বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া মোট ১ হাজার ২০০ কোম্পানির দেওয়া লভ্যাংশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট আকারের কিছু প্রতিষ্ঠানের দেওয়া লভ্যাংশও হিসাব করা হয়েছে। তবে বিশ্ব শেয়ারবাজারের এই রেকর্ড বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিশ্ব শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাই দেশীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি কোনো সুফল নিয়ে আসবে না বলে স্থানীয় শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সূত্র: বিবিসি
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *