শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩০ মার্চ আল-আরাফাহ্ ব্যাংক শেয়ার বিক্রির জন্য বিদেশি সংস্থা ইসলামিক করপোরেশন ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট (আইসিডি) অব দ্য প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে চুক্তি করে। আইসিডি হলো ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ চুক্তি অনুযায়ী আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ ও অপসারণে আইসিডিকে একচ্ছত্র আধিপত্য দেওয়া হয়। এ কারণে ১৫৪ কোটি টাকার সমমূল্যের ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির চুক্তিটি আটকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানতে চাইলে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি না পাওয়ায় আমরা শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আইসিডিকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে শর্তই ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর চুক্তি কার্যকর হবে। এখন আমরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানাব।’
আল-আরাফাহ্ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আইসিডির কাছে ১১ কোটি ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯২টি শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ৪ টাকা অধিমূল্য বা প্রিমিয়ার যোগ করে প্রতিটি শেয়ারের বিক্রয়মূল্য ঠিক হয় ১৪ টাকা। ফলে শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংকটির ১৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৮ টাকা সংগ্রহের কথা ছিল। সে জন্য গত ৩০ মার্চ আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বদিউর রহমান ও আইসিডির প্রধান নির্বাহী ও মহাব্যবস্থাপক খালেদ এম আল-আবুদীর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তিপত্রের ৪.২ ও ৬.১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আইসিডির দুজন পরিচালক থাকবেন। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসে থাকবেন একজন করে পরিচালক। আবার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে আইসিডিকে একজন স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া চুক্তির ৬.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্তির ক্ষেত্রে আইসিডির সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করতে হবে। আর চুক্তির ৬.৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ ও অপসারণ, বিনিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পুনর্গঠন, সংঘবিধি সংশোধন, অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধি, বহির্নিরীক্ষক নিয়োগ, নতুন শেয়ার ইস্যু, লভ্যাংশ ঘোষণা—এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে হবে আইসিডির একজন পরিচালকের উপস্থিতিতে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণে আইসিডির দুজন পরিচালকের সম্মতি নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও কোম্পানি আইন অনুযায়ী সব পরিচালকের মর্যাদা ও ক্ষমতা সমান। তবে এ চুক্তির মধ্যে আইসিডির পরিচালকদের বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা কোনো আইনই সমর্থন করে না। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে এক চিঠির মাধ্যমে বলা হয়েছে, ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি না থাকায় পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিকল্পে ১০ শতাংশ নতুন শেয়ার বিদেশি সংস্থার কাছে হস্তান্তর না করে প্রয়োজনে বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার ইস্যুর পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমআর