জবরদস্তি বাণিজ্য কূটনীতি আরো বাড়িয়েছে চীন

141834China-to-hold-5th-World-Internet-Conferenceস্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং গত সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে কথা বলার মাত্র দুই দিন আগে জার্মানি থেকে শুকরের মাংসের সমস্ত আমদানি নিষিদ্ধ করেছে বেইজিং। এটার পেছনের দৃশ্যমান যে কারণ, সেটা হল আফ্রিকান সোয়াইন ফ্লুর বিস্তার রোধ করা। জার্মানিতে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে বুনো শুয়োরের মৃত্যু হয়েছে। এই রোগটি এরই মধ্যে চীনেও ছড়িয়েছে। তবে কিছু বিশ্লেষক চীনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভিন্ন কারণ আনুসন্ধান করছেন। তাদের কাছে, এটি বেইজিংয়ের জবরদস্তি বাণিজ্যিক কূটনীতির সর্বশেষতম উদাহরণ।

প্রকাশ্যে স্বীকার করা না হলেও বেইজিং কর্তৃক জার্মানির শুকরের মাংস নিষিদ্ধ করার ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করছে বার্লিন। বেইজিং যে সুরক্ষা উদ্বেগের কথা বলেছে সেটাকে নিছক আমলাতান্ত্রিক অজুহাত বলেই মনে করছেন জার্মানি। চীন এই পদক্ষেপগুলো প্রায়শই এমন সব দেশকে টার্গেট করে নিয়ে থাকে যারা সম্প্রতিক সময়ে বেইজিংয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে এবং তাদের নীতি বা আচরণে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছে। শুয়োরের মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে মূলত বার্লিন যাতে চীনকে বিচ্ছিন্ন করার ওয়াশিংটনের প্রচারে যোগ না দেয় এবং চীনের মানবাধিকার রেকর্ডের সমালোচনা করা বন্ধ করে সে জন্য সতর্কতা।

সম্প্রতি চীনের জবরদস্তি কূটনীতির আরেক শিকার অস্ট্রেলিয়া। চীন-অস্ট্রেলিয়ান সম্পর্ক উষ্ণ হলেও এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসের উৎস অনুসন্ধানে ক্যানবেরা স্বতন্ত্র তদন্তের আহ্বান জানালে এই সম্পর্ক হিমশীতল হয়ে পড়ে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীন বেশ কয়েকটি অস্ট্রেলিয়ান সরবরাহকারী থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বার্লি এবং ওয়াইন আমদানির উপর অ্যান্টি ডাম্পিং কর আরোপ করে। চীনের নাগরিকরা যাতে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ না করে সে জন্য সতর্কবার্তাও দিয়েছিল বেইজিং।

অস্ট্রেলিয়ার আগে বেইজিংয়ের আক্রোশের শিকার হয়েছিল কানাডা। দেশটির কর্তৃপক্ষ আমেরিকার অনুরোধে ২০১৮ সালের শেষদিকে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানজুহুকে আটক করেছিল। সে সময় বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে দু’জন কানাডিয়ানকে আটক করে কারাগারে পাঠায়, পাশাপাশি বেইজিং ভ্রমণের সতর্কতা জারি করে। এছাড়া কানাডিয়ান সয়াবিন, ক্যানোলা এবং মাংসের আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল।

একইভাবে বেইজিংয়ের আক্রোশে পড়েছে ফিলিপাইন এবং জাপান। দেশ দুটির সঙ্গে চীনের আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। চীনের মানবাধিকার রেকর্ডের সমালোচনা করে বেইজিংয়ের তোপে পড়েছে সুইডেন। যুক্তরাজ্য এবং মঙ্গোলিয়া দালাই লামার সফরের কারণে এবং মার্কিন নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে চাওয়ার ফলে বেইজিংয়ের আক্রোশে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।

বর্তমানে চীনের আগ্রাসী কূটনীতির প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। অনেকে মনে করছেন, চীনের এই জবরদস্তি বাণিজ্য কূটনীতির একটি বিপরীত নেতিবাচক প্রভাব আছে। এই আগ্রাসী কূটনীতি চীনকে বিশ্ব থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সূত্র : ফাইনান্সিয়াল টাইমস।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *