ট্রাম্পের সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে সিমেন্ট দিবে লাফার্জহোলসিম

imagesনিজস্ব প্রতিবেদক :

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিতর্কিত’ মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করতে চায় ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লাফার্জহোলসিম। এক সাক্ষাৎকারে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অলসেন এ বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানান। খবর এএফপি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে মেক্সিকো সিটি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট এবং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

অলসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্পে উপকরণ সরবরাহে আমরা প্রস্তুত। আমরা সিমেন্ট জগতে নেতৃস্থানীয়। সুতরাং সব ক্রেতাকেই সমান গুরুত্ব দেবো। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি বেশি ভবন নির্মাণ বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমাদের জন্য ইতিবাচক।

বিতর্কিত এ দেয়াল নির্মাণে সিমেন্ট বা অন্য উপকরণ সরবরাহে কোম্পনির সুনামে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লাফার্জহোলসিম কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত নয়। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহই আমাদের লক্ষ্য। বিষয়টিকে আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি না।

এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৪ সালে সিরিয়ায় কারখানা চালু রাখতে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে লাফার্জহোলসিমের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ওই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে কোম্পানিটিকে সতর্ক করেছিলেন। এছাড়া কোম্পানিকে যে কোনো প্রকল্পে বিড করার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত মাসের শেষ দিকে দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নিয়েছে। ওই প্রাথমিক তালিকায় ৬০০ কোম্পানির মধ্যে লাফার্জহোলসিমও রয়েছে। এ প্রকল্পে অরাজনৈতিক ভূমিকায় কোম্পানিটির জনপ্রিয়তায়, বিশেষ করে ইউরোপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার সমর্থন দিয়েছিল। এতে কোম্পানিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি কয়েক হাজার গ্রাহক তাদের সেলফোন থেকে উবারের অ্যাপ ডিলিট করে দেন। তাই হোলসিম বিতর্কিত দেয়াল নির্মাণে উপকরণ সরবরাহ করলে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে কোম্পানিটি সরাসরি সাধারণ ক্রেতাদের কাছে সিমেন্ট বিক্রি না করায় খুব সামান্যই প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রে লাফার্জহোলসিমের প্রতিদ্বন্দ্বী আয়ারল্যান্ডের সিমেন্ট উৎপাদনকারী সিআরএইচ। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণে কোনো ধরনের উপকরণ সরবরাহ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

২০১৫ সালে ফ্রান্সের সিমেন্ট উৎপাদনকারী কোম্পানি লাফার্জ ও সুইজারল্যান্ডের হোলসিম অধিগ্রহণের মাধ্যমে একটি কোম্পানিতে পরিণত হয়। এ গ্রুপ কোম্পানিটি প্রত্যাশা করছে, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো বিনিয়োগ কর্মসূচিতে তারা সিমেন্ট ও অন্য উপকরণ সরবরাহ করবে।

সিমেন্ট উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে লোকসানে থাকলেও গত বছর মুনাফায় ঘুরে দাঁড়ায়। আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অলসেন বলেন, কী পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের খরচ ধারণার চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তা কমিয়ে আনবেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইট বার্তায় খরচ কমানোর এ দাবি করেন তিনি। তবে এটি কীভাবে সম্ভব, তা পরিষ্কার করেননি ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের (ডিএইচএস) একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার। এর আগে নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ওই দেয়াল নির্মাণে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার খরচ হবে।

উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারের অংশ ছিল অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতে মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণের। এমনকি তিনি ওই দেয়াল নির্মাণের অর্থ মেক্সিকোকেই দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন। তবে মেক্সিকো এ অর্থ দিতে অস্বীকার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *