দুই বছর গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ

bgmeaস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

কোনোভাবেই এখন শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা যোক্তিক হবে না। অন্তত দুই বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে। যা পোশাক খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।

বুধবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে শিল্পে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

যৌথ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বিকেএমইএ। এতে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং বিকেএমইএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গনশুনানীতে শিল্পে গ্যাসের মূল্য বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ দশমিক ৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুয়ায়ী গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পারে ১৩২ শতাংশ। এতে শিল্পে উৎপাদান খরচ বৃদ্ধি পাবে প্রায় পাঁচ শতাংশ। আমরা মনে করি এই প্রস্তাবনা শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই মূল্যবৃদ্ধি করা হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে এ খাতে মজুরি বাড়ছে। গত ডিসেম্বর থেকে নূন্যতম মজুরি ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ইউরোপে দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তাই আমরা চাই অন্তত দুই বছর শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যেন না হয়। এমনিতেই শ্রমিকদের বেতন আমরা বাড়িয়েছি। সেটাই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে পোশাক খাতে নূন্যতম মজুরি বাড়ানো হয়, তখন আমাদের দাবি ছিল কোনো উইটিলিটির দাম যেন না বাড়ানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে নিশ্চিত করতে হবে আমাদের নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস দেয়া হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০১২ সালে গ্যাস সংযোগের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম তার সংযোগ কেবল পেতে শুরু করেছি। শিল্পকারখানায় গ্যাস না পাওয়ার জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটা মেকাপ করতে হবে। আমাদের ইভিসি মিটার দিতে হবে। সরকার যেটা বলেছে ব্যাংকে ৯ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদ হার হবে। আমরা ৬ শতাংশ হারে ব্যাংকে রাখতে পারবো। এটাই আজ পর্যন্ত ব্যাংক বাস্তবায়ন করতে পারলো না। আমাদের সঙ্গে এগুলো ঠিক না করে হটাৎ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ সরবরাহ হয় শিল্প খাতে। এটা খুবই নগণ্য। সরকারের কাছে অনুরোধ এমন কোনো পদক্ষেপ নিবেন না যাতে করে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়, শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়, অর্থনীতি গতিহীন হয়ে পড়ে।

বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন এসময় বলেন, প্রতি ১০ বছরের জন্য একটি শিল্প পলিসি করা প্রয়োজন। কোন জিনিসের কেমন দাম বাড়ানো হবে সেটা এ পলিসিতে থাকবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোও সে অনুয়ায়ী পরিকল্পনা করতে পারবে।

তিনি বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট গ্যাস কোম্পানিগুলে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিতে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা ক্লিন নয়। এর প্রভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যেসব মিল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ না করা পর্যন্ত গ্যাসের কোনো প্রকার মূল্য বৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এমনিতিই খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপে ব্যবসায়ীরা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/জেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *