পিপলস লিজিংয়ের ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : পরিচালক গ্রেফতার

dudokবিশেষ প্রতিবেদক :

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ১৪৬ কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মামলায় প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব টাকা আত্মসাতে পিপলস লিজিংয়ের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর পরই গতকাল প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক পরিচালকসহ দুজনকে গ্রেফতারও করেছে দুদক।

দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, দুদকের অনুসন্ধান শেষে প্রাথমিক প্রমাণ স্বাপেক্ষে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক পরিচালকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়েছে। গতকালই কমিশনের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় মামলা দুটি করেন। মামলার পরই দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের আদালতে নেয়া হবে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন— পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিঞা ও মেসার্স নাহার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ সোলায়মান রুবেল। দুই মামলার ১৪ আসামির মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক দলিল-উল-হক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোস্তাক আহমেদ দুটি মামলাতেই আসামি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— পিপলস লিজিংয়ের পরিচালক খবির উদ্দিন মিঞার স্ত্রী শিরিন আহমেদ, ছেলে খাইরুল হাসান, তিন মেয়ে শারমিন আহমেদ, তানিয়া আহমেদ ও সোনিয়া আহমেদ, দুই জামাতা আবদুস সোবহান ও আশরাফ খান, শ্যালক আতাউর রহমান, নাহার ইন্টারন্যাশনালের মালিক সোলায়মান রুবেলের বাবা গিয়াস উদ্দিন হাওলাদার এবং পিপলস লিজিংয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক এএনএম তারিক চৌধুরী।

দুদক সূত্র জানায়, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ও বর্তমান পাঁচ পরিচালক বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই কৌশলে প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে এ বিষয়টি নজরে এলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় অনুসন্ধানে নামে দুদক।

অনুসন্ধানে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আর্থিক লাভের আশায় অবৈধভাবে ঋণ সুবিধা দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঋণ প্রদানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম সার্কুলার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়মাচার অমান্য করেছে। ভুয়া জামানত ব্যবহারের পাশাপাশি বিনিয়োগ হিসাবে বকেয়া থাকা সত্ত্বেও মার্জিন ঋণ দিয়েছে। ফলে পিপলস লিজিংয়ের ১৪৬ কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এতে ঋণগ্রহীতার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারায় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

দুই মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, প্রথম মামলায় পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক খবির উদ্দিন মিঞাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে জামানত ছাড়াই ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই পরিচালক ও তার পরিবারের নয়জন সদস্য ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

আরেক মামলায় নাহার ইন্টারন্যাশনালের মালিক সোলায়মান রুবেলের বিরুদ্ধে ভুয়া জামানতের মাধ্যমে ৭২ কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বলে এজাহারে বলা হয়। কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সোলায়মান রুবেলের বাবাও এ মামলার আসামি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ের বর্তমান ও সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটির ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক। এরই অংশ হিসেবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল দুটি মামলা করেছে দুদক। বাকি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কয়েকজন পরিচালক তাদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগকৃত টাকা এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করেছেন বলে জানিয়েছেন পিপলস লিজিংয়ের কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পরই তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কয়েকজন পরিচালক এরই মধ্যে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দেনা পরিশোধ করেছেন। যারা বিষয়টিতে এখনো কোনো সমাধানে আসেননি, তাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। ফলে আদালতের মাধ্যমেই তারা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণ প্রদান করবেন।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *