হ্যাচারির পাশে ইটভাটা রুখতে অধিদফতরে আমানের চিঠি

Poultryরাজশাহী প্রতিনিধি:

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ব্রির্ডার খামার (পোল্টি হ্যাচারি) সংলগ্ন এলাকায় ইটভাটা (ব্রীক ফিল্ড) স্থাপনে আপত্তি জানিয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এই প্রজনন খামার এলাকায় যাতে ইটভাটা স্থাপিত না হয় সে জন্য রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যলয় থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহা-পরিচালকসহ রাজশাহী ও বগুড়া পরিবেশ অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও একটি গোষ্ঠী পোল্টি হ্যাচারির পাশে লবিংয়ের মাধ্যমে ইটভাটা স্থাপেনের জেষ্টা চালাচ্ছে।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর একটি চিঠিতে জানানো হয় সরকারি গেজেটে বলা হয়েছে খামারের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভারি শিল্প স্থাপন করা যাবে না। এই চিঠি পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সকল দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আমান পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড ব্রিডার খামারের পার্শ্বে উপেন অটোমেটিক ব্রীকস ফিল্ড লিমিটেড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্রীক ফিল্ডটি স্থাপন করা হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ হবে এবং প্রজনন খামারটির ক্ষতি হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন উল্লেখ করেছেন, প্যারেন্টস্টক প্রজনন খামারটি প্রথম ও প্রধান শর্ত যথাযথভাবে বায়োসিকিউরিটি মেনে খামার পরিচালনা করা। তাই উপেন অটোমেটিক ব্রীকস ফিল্ড লিমিটেড স্থাপনে খামারটি বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

‘ব্রীক ফিল্ডে প্রতিনিয়ত প্রচুর লোকের সমাগম ঘটবে এবং ট্রাক সচরাচর যাওয়া আসা করবে, তাই লোক ও পরিবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের পরিবাহক হিসেবে কাজ করবে’ বলে চিঠিতে অভিমত দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এর আগে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাইফুল ইসলাম চলতি বছরের আগস্টে উপেন ব্রীক ফিল্ড স্থাপন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওই পরিদর্শনের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পাঠান।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ব্রির্ডার খামার সংলগ্ন উপেন ব্রীক ফিল্ড নামে একটি কারখানা স্থাপন করা হবে। যেহেতু বিভিন্ন সংবেদনশীল পোল্ট্রি রোগের টীকা দেওয়া হয়, তাই জৈব নিরাপত্তার জন্য লোকালয় এবং দেশী মুরগী, হাঁস ও অন্যান্য খামার থেকে প্যারেন্ট প্রজনন খামারগুলো নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে যত কম লোক অথবা লোকজনের সমাগম হয় না বললেই চলে এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়।

ফলে আমান পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড সংলগ্ন ব্রিক ফিল্ড স্থাপন করা হলে প্রত্যক্ষভাবে ব্রির্ডার খামারটি হুমকি ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- প্যারেন্টস্টক প্রজনন খামারটি প্রথম ও প্রধানশর্ত যথাযথভাবে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা। সে ক্ষেত্রে ব্রীক ফিল্ড স্থাপন করলে প্রধানতম শর্তটি ভেঙে যাবে, ফলে খামারটি ধ্বংসের মুখে পতিত হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রীক ফিল্ডে শব্দ ও বায়ু দূষণ হবে যা একটি প্রজনন খামারের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। ব্রীক ফিল্ডের উচ্চ ও অনাকাঙ্খিত শব্দ প্যারেন্ট স্টকগুলোর শরীর বৃদ্ধি ব্যাহত করবে, হজম ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাবে এবং নার্ভাস বা স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলবে। ফলে উৎপাদন দারুণ ভাবে ব্যাহত হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে এবং ব্যয়বহুল পোল্ট্রি টীকা দেওয়ার পরও যে কোন সময় দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

‘ব্রীক ফিল্ড থেকে সৃষ্ট ধুলাকণা ও অন্যান্য দূষিত যে কোন বর্জ্য বায়ু থেকে সৃষ্ট দূষিত পদার্থ প্রজনন খামারের উৎপাদন ব্যাঘাত ঘটাবে, প্রজননকৃত ডিম ফুটানোর অনুপযোগী হবে এবং প্রজননকৃত ডিম থেকে যেসব ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হবে তা বিকলাঙ্গ ও প্রান্তিক খামারীদের সুস্থ সবল ব্রয়লার বাচ্চা সরবরাহ করার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রীক ফিল্ড থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া ও বর্জ্য দূষিত কণাগুলো কার্বনমনোঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড বহন করে, যা যে কোন প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতি সাধনকরে। সালফার ডাইঅক্সাইড শ্বাসনালীতে মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে, তাই প্রজনন খামারটির শতভাগ হুমকি ও ক্ষতিসাধিত হবে।

এ বিষয়ে ইটভাটা স্থাপনের পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান উপেন ব্রাদার্স অটোব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর উপেন্দ্রনাথ মন্ডোল জানালেন, এটা পুরোপুরি দূষণমুক্ত। এর জন্য আশেপাশের পরিবেশ দূষিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের প্রস্তাবিত অটো ব্রিক্সমিলের সব শর্ত তারা পূরণ করেছেন। তিনি পারিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রত্যাশায় রয়েছেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, তারা এই ইটভাটা বন্ধের জন্য একটি আবেদন পেয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। দুই পক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানী হয়েছে। পরবর্তি সিদ্ধান্তের জন্য বগুড়াতে পরিচালক দপ্তরে ফাইল পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আমান গ্রুপের সিনিয়র জিএম রবিউল হাসান বলেন, আমান পোল্টি এন্ড হ্যাচারী বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করছে। এ প্রজনন এলাকায় কোন ব্রিকস কোম্পানি হলে প্রজনন খামারটির পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। এ কারণে পরিবেশ অীধদফতর বিষয়টি আমলে নিলে একটি প্রজনন খামার ও পরিবেশ রক্ষা পাবে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *