কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতানুগতিক মুদ্রানীতি ঘোষণা

atiur-2নিজস্ব প্রতিবেদক :

গতানুগতিক ধারায় নতুন মুদ্রানীতি (জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের) ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, প্রবৃদ্ধির উচ্চতর ধারা অর্জনের উচ্চ গুরুত্বের বিষয়ে কোনো মহলের সাথেই বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিমত অবশ্যই নেই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সংযত মুদ্রানীতির মধ্যে থেকেই ছোট বড়ো সব ধরনের উৎপাদনমুখী উদ্যোগে অর্থায়ন পর্যাপ্ততার বিষয়ে জোরালো নীতি সমর্থন দিয়ে আসছে। উৎপাদন কর্মোদ্যোগের জন্য বিবিধমুখী এসব নীতি সমর্থন সংকুলান করে প্রণীত হয়েছে ২০১৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম। এর প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ভঙ্গি, যা সামাজিক ন্যায়বোধভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তার পাশাপাশি ঋণ যোগানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্ফীতি এড়িয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি পরিমিতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা জোরালো করবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে।

মুদ্রানীতিতে বলা হয়, দেশজ উৎপাদনে ৭ শতাংশ প্রকৃত প্রবৃদ্ধি এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ধরে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত হয়েছে। বিগত অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১০ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলিত হয়েছে আগের অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরে ১৫ শতাংশে। সরকারি খাতে ঋণ যোগানের ২০১৬ সালের ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন আপাত:দৃষ্টে উচ্চ প্রতীয়মান হচ্ছে মূলত বিগত অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে। ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের ১৩ দশমিক ১ শতাংশের বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য ১৫ দশমিক ৬ শতাংশে প্রাক্কলিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ মুদ্রা যোগানে আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ। দেশে বিনিয়োগ কার্যক্রম জোরদার হওয়ার ফলে ব্যাংকিং খাতের নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে মন্থর হয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের বর্তমান বৃদ্ধি হারেও শিথিলতা আসবে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি খাতের ঘাটতিও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ জোরদার হওয়ার কারণে বৃদ্ধি পাবে, তবে জিডিপির দুই শতাংশের মতো মাত্রার প্রাক্কলিত ঘাটতি কোনো উদ্বেগের কারণ হবে না।

নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় পরিমিত রাখলেও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট এবং খাদ্য ও জ্বালানি বহির্ভূত কোর মূল্যস্ফীতিতে নিম্নগামী প্রবণতা সুস্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপো, রিভার্স রেপো সুদহার সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় নামিয়ে আনার বিবেচনায় আমরা দ্বিধান্বিত হবো না। নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন উৎপাদনমুখী উদ্যোগমালায় দক্ষভাবে সঞ্চালনের লক্ষ্যে আমাদের আর্থিক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, কর্পোরেট সুশাসন ও জবাবদিহিতার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় নজরদারির বিষয়গুলো ২০১৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্রে পুনরুক্ত হয়েছে।

পাশাপাশি আরো স্পষ্টভাবে আলোকপাত করা হয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব মুদ্রা ও আর্থিক নীতিভঙ্গিগুলোর ওপর। উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনানুগ এখতিয়ার ও দায়িত্বের আওতায় এসব নীতিমালার ওপর এই গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই এখতিয়ার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে দেশের আর্থিক খাতে সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন মূলধারাভুক্ত করার বাংলাদেশের উদ্যোগগুলো বহির্বিশ্বে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে এসব উদ্যোগ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ক্ষুন্ন না করে বরং আরো জোরদার করেছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার অপ্রতুলতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি মন্দা এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘ্নের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং খাত থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত ১৭ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকটা নিচে মে ২০১৫ শেষে ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। জুনে এই মাত্রা কিছুটা বাড়লেও এগারো শতাংশের নিচে থাকবে মনে হয়, বিশেষ করে সরকারি খাতে জুন নাগাদ ঋণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক থাকায়।

বেসরকারি খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধিও জুন নাগাদ ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের মতো থাকবে মনে হয়। এটা পরিষ্কার যে, রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘ্ন না থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো উচ্চতর হতো।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *