শেয়ারবাজারের স্বার্থে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতি প্রনয়নের পূর্বে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের মতামত নেবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির।
মনিটরি পলিসি স্টেটমেন্ট: ইমপ্লিকেশন অন প্রাইভেট সেক্টর শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব আশ্বাস দেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্টি (ডিসিসিআই) গতকাল শনিবার এ সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসীর এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন এবং ডিএসই সাবেক পরিচালক ও সভাপতি এবং ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
মূলপ্রবন্ধে শেয়ারবাজারে উন্নয়নে বেশ কিছু আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রীন ফিল্ড ইনফ্রাস্টাকচার প্রজেক্টগুলো বাজার থেকে মূলধন উঠানো, স্পন্সরদের শেয়ার লক-ইন পিরিয়ড ৩ বছর থেকে কমিয়ে ১ বছর করা, অর্থমন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ডিএসই, সিএসই, আইডিআরএ মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে প্রত্যেক প্রান্তিকে সমন্বয় সভার মাধ্যমে বাজার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা, করপোরেট গভর্ণেন্স নিশ্চিত করা, বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, বড় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার বিষয়ে জোড় দেয়া হয়েছে।
সেমিনারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, শেয়ারবাজারের সঙ্গে বাংলাদেশে ব্যাংকের পারস্পারিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০১০ সালের ধসের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ারবাজারে ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে মুদ্রানীতি প্রনয়নের সময় বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এ সময় শেয়ার দর এবং লেনদেনে বড় ধরনের ওঠানামা করে। অথচ মুদ্রানীতি প্রনয়নের সময় শেয়ারবাজারে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কোনো ধরনের মতামত নেয় না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এতে করে মুদ্রানীতিকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা,আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে সাধারন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরী হয় আস্থার সংকট। যা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগে। আর এ সময় বিনিয়োগকারীরা বেশ ক্ষতির সম্মুখিন হয়। তাই শেয়ারবাজারে স্বার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত মুদ্রানীতি প্রনয়নের পূর্বে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নেয়া। আর তাঁর এ বক্তব্যের পেক্ষিতে গভর্ণর আশ্বস্ত করেন মুদ্রানীতির পূর্বে শেয়ারবাজারে স্বার্থে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডিবিএ প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণের পরিবর্তে শেয়ারবাজারকে উৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে একদিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে অপরদিকে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালি হবে।
তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারের মূলধনের ৪০ শতাংশ ব্যাংকের দখলে। এতে ব্যাংকের শেয়ার দর উঠানামায় শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব পড়ে। এরমধ্যে কিছু ব্যাংক বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য অনিরীক্ষিত প্রান্তিক হিসাবগুলোতে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখায়। ঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য ঝুকির জন্য সঠিক সঞ্চিতি (প্রভিশন) না রেখে এমনটি করে। তবে বছরের চূড়ান্ত ও নিরীক্ষত আর্থিক হিসাবে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসে। তখন ওইসব ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের প্রতি তিনি আহবান জানান তিনি। তার বক্তব্যের পেক্ষিতে গভর্ণর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবে সঞ্চিতি ঘাটতির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/