শেয়ার ব্যবসায় সফল হওয়ার ‌‌‌‘সুবর্ণ’ ১০টি তরিকা

share marketগনেশ মোদক  :

শেয়ারবাজারে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রলোভন সর্বদাই বিনিয়োগকারীকে খাদের কিনারে ফেলে দেয়। শেয়ারবাজারে অর্থ উপার্জন সহজ ব্যাপার নয়। ধৈর্য ও শৃঙ্খলা ছাড়াও বাজার সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা ও অার্দশ বোঝাপড়ারও প্রয়োজন রয়েছে। কয়েকবার বাজারে ‌ধস বিনিয়োগকারীদের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা দোটানায় আছেন বিনিয়োগ করবেন, না শেয়ার ধরে রাখবেন না বিক্রি করবেন। যদিও এ নিয়ে বাজারে সফলতার জন্য কোনো কার্যকরী ফর্মুলার সন্ধান পাওয়া যায়নি । তবে সুবর্ণ কিছু বিধি অাছে যা অাপনি বিচক্ষণতার সাথে অনুসরণ করলে অাপনার লাভবান হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে। সূত্র : ইকনোমিক টাইমস।

১. শিশুসুলভ মানসিকতা বর্জন করুন : প্রথাগত ক্রেতারা সচরাচর বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের কর্মকান্ড দ্বারা প্রভাহিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে তার চারপাশের সবাই সুনির্দিষ্ট কোনো খাতে বিনিয়োগ করে। তখন সম্ভবনাময় বিনিয়োগকারীরা একই কাজ করেন। কিন্তু এই কৌশল পরিণামে তাকে ভোগায়।
সর্বদাই শিশুসুলভ মানসিকতা বর্জন করা উচিত তা নয়। অাপনি যদি না কষ্টের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে না হারিয়ে থাকেন। বিশ্বের বড় বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেন, অন্য সবাই যখন লোভী তখন সতর্ক হোন এবং লোভী হোন যখন সবাই বিনিয়োগ করতে ভয় পায়।

২. তথ্যবহুল সিদ্ধান্ত নিন : শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অাগে প্রচুর জানুন। কিন্তু এ কাজ খুবই কম করেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারী যে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে জানেন সেখানে বিনিয়োগ করে থাকেন। যাহোক, এভাবে বাজারে অর্থ ঢালা সঠিক পদ্ধতি নয়।

৩. অাপনি যে খাত সম্পর্কে বোঝেন সেখানে বিনিয়োগ করুন : কখনো ব্যবসা করার পরিবর্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। অন্যকথায়, অাপনি যে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন জানুন কোম্পানিটি কিসের ব্যবসা করে।

৪. বাজার দর নিয়ে পরিকল্পনা করা বাদ দিন : এমনকি ওয়ারেন বাফেট এ কথা বলেছেন। তার মর্ত, বাজারদর সীমা মানুষকে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলে না। তবে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এর উল্টোটি ভাবেন। অার্থিক পরিকল্পনাবিদরা এ উল্টো ধারণা বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এ ভুল ধারণায় তারা কষ্টের অর্থ জলে ফেলেন।

৫.  শৃঙ্খলাবদ্ধ বিনিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করুন : বলা হয়, বাজার যখন ব্যাপক উত্থানে তখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বল্পকালীন অাতঙ্ক বিরাজ করে। বাজারে এই ভঙ্গুরতা ব্যাপক দর বৃদ্ধি হওয়া স্বত্ত্ত্বেও বিনিয়োগকারীকে বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ লোকসানের সম্মুখীন করে। যাহোক, সঠিক শেয়ারে পদ্ধতিগতভাবে অর্থ বিনিয়োগ ও শেয়ার ধরে রাখা বিনিয়োগকারীরা অতীতে বিপুল অর্থ উপাজর্ন করতে পেরেছেন বলে দেখা গেছে। এজন্য ধৈর্যশীল হওয়া বিচক্ষণতার পরিচয় এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ বিনিয়োগ পদ্ধতি ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি বিস্তৃত বাজার চিত্র বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর হোন।

৬. অাবেগ যেন অাপনাকে হতভম্ব না করে, লক্ষ্য রাখুন : অাবেগ, বিশেষ করে ভয় ও লোভ কে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে অর্থ লোকসান দেন। তেজিবাজারে সাময়িক বিপুল সম্পদের লোভ ধরে রাখা কঠিন।  কারও আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প বিনিয়োগকারীদের লোভ বাড়িয়ে দেয়। এই প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের মাঝে বুদবুদ সৃষ্টি করে অজ্ঞাত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করতে বাধ্য করে অথবা এতে তারা ঝুঁকির কথা সত্যিকার অর্থে না ভেবে সহজেই অবস্থান নেন। এতে বাজারের উল্টো চিত্র দেখা দিলে সম্পদ তৈরির বদলে তাদের হাতের আঙুল অাগুনে পোড়ার মনোভাবের মুখোমুখি হতে হয়। অপরদিকে, পতনের বাজারে তারা আতঙ্কে থেকে একবারে সর্বনিম্ন ধরে শেয়ার বিক্রি করেন। এভাবে ভয় ও লোভ তাদের মাঝে দুর্বল মানসিকতা তৈরি করে। তারা বাজার অভিজ্ঞদের নির্দেশ মেনে চলেন না।

৭. বিনিয়োগের (পোর্টফলিও) বিস্তৃত তথ্য সংরক্ষণ :  বিনিয়োগ ক্ষেত্রের বিচিত্রকরণ সম্পদের ধরন ও উপাদান পরীক্ষা করে সর্বনিম্ন পর্যায়ের ঝুঁকি নিয়ে কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপাজন করার প্রধান উপায়। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতার ওপর বিচিত্রকরণের মাত্রা নির্ভর করে।

৮. বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা লালন করা : আপনার বিনিয়োগ থেকে সবচেয়ে ‌সেরাটা আশা করা অযৌক্তিক কিছু নয়। কিন্তু  অাপনি অবাস্তবসম্মত পূর্বধারণার ওপর নির্ভর করে আপনার আর্থিক লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করেন। তাহলে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক দরবৃদ্ধিকালে অসংখ্য শেয়ারে ৫০ শতাংশের বেশি লাভ হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, আপনি শেয়ারবাজার থেকে সর্বদাই একই পরিমাণ লাভের প্রত্যাশা করবেন। এরজন্য, ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, শেয়ারবাজারে ১২ শতাংশের বেশি লাভ নির্বাচনে তহবিল গঠনের মত কঠিন কাজ। আপনাকে এটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যদিও এটাও আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

৯. শুধু লাভবান তহবিলে বিনিয়োগ করুন : যদি আপনি শেয়ারবাজারের মতো ভঙ্কুর বাজারে ঝুঁকি নিতে চান তাহলে আপনি লাভবান তহবিলে বিনিয়োগ করে লোকসান দিতে পারেন। এটি বলা অপরিহার্য নয় যে, আপনি বর্তমান মন্দা অবস্থায় অর্থ লোকসান দিবেন। আপনার এই বিনিয়োগ আপনাকে ভবিষ্যতে প্রচুর মুনাফা উপহার দেবে। কিন্তু কেউ এর শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এটি বলা বাহুল্য, লাভবান তহবিলে শুধু আপনাকে প্রচুর মুনাফা দেবে।

১০. বিরতিহীনভাবে পর্যবেক্ষণ করুন : বর্তমানে আমরা বিশ্বগ্রামে বাস করি। বিশ্বের কোনো অংশে কোনো ঘটনা ঘটলে এর প্রভাব আমাদের অর্থবাজারের ওপর পড়ে। এর জন্য আমাদের ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগের ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করা উচিত ও এর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত প্রভাব থাকবে। যদি আপনি জ্ঞানের অভাবে আপনার পোর্টফলিও পর্যালোচনা করতে পারেন না পারেন । তাহলে আপনি একজন দক্ষ আর্থিক পরিকল্পনাকারীর কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন। অনেক বাজার বিশেষজ্ঞের অভিমত, যদি এটি আপনি করতে না পারেন তাহলে মনে রাখুন শেয়ারবাজার আপনার জন্য নয়। তাহলে আপনার অর্থ নিরাপদ বা কর্ম ঝুঁকিপূর্ণ কোনো খাতে বিনিয়োগ করুন।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/মোদক /শুভ.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *