শেয়ারবাজারে সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির (সাবিনকো) শেয়ার কেলেংকারি মামলার রায় সোমবার। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারসংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন।
মামলার আসামি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কুতুবউদ্দিন আহমেদ কারসাজি করে ২০০০ সালে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশ ও সৌদির যৌথ মালিকানায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি। ওই বছরের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
এরপর বিষয়টি তদন্ত করে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ রানা খান এবং আসামিপক্ষের এসএম আবুল কালাম আজাদ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামি মো. কুতুবউদ্দিন আহমেদ সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ওই সময়ে টেক্সটাইল খাতের ডাইনামিক টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের বেক্সিমকো ফার্মা, সিমেন্ট খাতের মেঘনা সিমেন্টসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার অস্বাভাবিকভাবে কেনাবেচা করেন। এতে বাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বেড়ে যায়।
ওই সময়ে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান সাবিনকোর নামে ১৪টি ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে আইন লংঘন করে শেয়ার কেনাবেচা করেন। একই দিনে তিনি যে ব্রোকারেজ হাউস থেকে শেয়ার কিনেছেন, ঠিক তাৎক্ষণিক অন্য ব্রোকারেজ হাউসে তা বিক্রি করেছেন। এমনকি একই ব্রোকারেজ হাউসে শেয়ার কিনে তা ওই সময়ে বিক্রি করেছিলেন। এতে শেয়ারের চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়।
সূত্র থেকে আরো জানা যায়, কুতুবউদ্দিন আহমেদ ডাইনামিক টেক্সটাইলের শেয়ার ২০০০ সালের ১, ৩, ৪, ৬ জুন আজম সিকিউরিটিজ ও ইমতিয়াজ সিকিউরিটিজ থেকে কেনেন। আর একই দিন তিনি ওই শেয়ার আজম সিকিউরিটিজ ও নবারুন সিকিউরিটিজে বিক্রি করেন।
এদিকে তিনি বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার ৮, ১৬, ১৮, ১৯, ২৩ জুলাই আজম সিকিউরিটিজ, ইমতিয়াজ সিকিউরিটিজ, এসসিএল সিকিউরিটিজ ও নবারুন সিকিউরিটিজ থেকে কেনেন। অপরদিকে একই দিনে তা আজম সিকিউরিটিজ, ইমতিয়াজ সিকিউরিটিজ, এসসিএল সিকিউরিটিজ থেকে বিক্রি করেন।
এ ছাড়া মেঘনা সিমেন্টের শেয়ার তিনি ৮ জুন এসসিএল সিকিউরিটিজ থেকে কিনে তা ওই হাউস থেকে বিক্রি করেন। আর ২৬ জুলাই আজম সিকিউরিটিজ থেকে কিনে তা এসসিএল সিকিউরিটিজ থেকে বিক্রি করেন। প্
রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০০০ সালের জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত কুতুবউদ্দিন ও তার প্রতিষ্ঠান সাবিনকোর নামে মোট ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮০টি বেক্সিমকো ফার্মা ও ডাইনামিক টেক্সটাইলের শেয়ার কেনেন। প্রথম পর্যায়ে তারা ডাইনামিক টেক্সটাইলের শেয়ার কেনেন। এতে ওই শেয়ারসহ টেক্সটাইল খাতের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। পরে তারা বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারে বিনিয়োগ শুরু করেন। তখন শেয়ারবাজার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
এক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ১৭(এ), সি, ডি, ই(২)(৩)(৪)(৫) ধারা লংঘন করেছে। একই সঙ্গে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংক পোর্টফোলিও) প্রবিধানমালা ১৯৯৬-এর প্রবিধান ৩৩ লংঘন করেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে দেয়া রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের ৬নং শর্ত লংঘন করেছে।
২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর বিএসইসির তৎকালীন পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর ২০০৯ সালের ২১ জুলাই মামলাটির বাদী পরিবর্তন হয়। নতুন বাদী হন তৎকালীন আইন বিভাগের পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
তবে শেয়ারবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার ফলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।