৩ মাসে ৬০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে রাকাব

 

krishiস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জুন মাসে কার্যক্রম শুরু করে তিন মাসে ৬০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। শুরুতে রাজশাহীতে কৃষি ঋণ বিতরণ কম হলেও গত দুই মাসে এ চিত্র পাল্টেছে। বেড়েছে কৃষি ঋণ বিতরণ ও গ্রহণের হার।

অর্থ বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে রাকাবের ৩৮৩টি শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে ৬১৩ কোটি ২ লাখ টাকা। প্রথমদিকে এটি ১০ শতাংশ হলেও সেপ্টেম্বরে এসে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এর দেয়া তথ্য বিশ্লেষণে এমনটাই জানা গেছে।

রাকাব সূত্র জানায়, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ৩৮৩টি শাখার মাধ্যমে ৬১৩ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসেই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ২৮৩ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ১৬ হাজার ৫৭২টি আবেদনের বিপরীতে এ ঋণ বিতরণ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের কৃষকরা ফুল, ফল, শস্য, মাছ, হাঁস, মুরগি, দুগ্ধ খামার এবং প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত খামারিরা এ প্রণোদনার বিশেষ ঋণ পাওয়ার যোগ্য।

রাকাবের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জুন মাসে কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই তেমন ঋণ বিতরণ না হলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে ৩৮৩টি শাখার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬১৩ কোটি ২ লাখ টাকা।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে কৃষি, শস্য, শিল্প-সার্ভিস ও সিএমএসএমই এই ৪ খাতে কৃষকদের ২৮৩ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ১৬ হাজার ৫৭২টি আবেদনের বিপরীতে এই ঋণ বিতরণ করা হয়। এই ৪ খাতে বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে চলতি মূলধনের কৃষিখাতে ৩২৯ কোটি, সিএমএসএমই খাতে ৩৬ কোটি, শস্য খাতে ৪ শতাংশ সুদে ৯৫০ কোটি, শিল্প-সার্ভিস খাতে ৫৭ কোটি টাকা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ ঋণ বিতরণ চলবে চলতি বছরের ৩০ ডিসম্বর পর্যন্ত। এছাড়াও মৎস্য, প্রাণি, ডেইরি ও শস্য খাতসহ অন্যান্য খাতে ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে রাকাব।

এদিকে, কৃষিখাতের আওতায় ৩ হাজার ৭২ আবেদনের বিপরীতে ১৬০ কোটি। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প বা সিএমএসএমই খাতে ৫৫৭ জনের আবেদনের বিপরীতে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শস্য খাতে ৪ শতাংশ সুদে ১২ হাজার ৯৪৩ আবেদনের বিপরীতে কৃষকরা ঋণ সুবিধা পেয়েছে ১০৭ কোটি টাকা।

রাকাব সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা মৎস্য, প্রাণি, ডেইরি ও শস্য খাতসহ অন্যান্য খাতে বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের রয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। শস্য খাতে ৯৫০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ হয়েছে মাত্র ৮৬ কোটি টাকা। প্রণোদনা প্যাকেজের টাকাসহ ১৯৩ কোটি।

একইভাবে, চলমান কৃষি খাতে ৭০০ কোটির বিপরীতে ১৫৫ কোটি, মৎস্য খাতে ৫০ কোটির বিপরীতে ৯ কোটি ২৭ লাখ, প্রাণিসম্পদ-ডেইরি খাতে ১০০ কোটির বিপরীতে ১১ কোটি ৫৩ লাখ, খামার ও সেচ যন্ত্র খাতে ১০ কোটির বিপরীতে ৪ লাখ, দারিদ্র বিমোচন খাতে ৪০ কোটির বিপরীতে ৪ কোটি ৭ লাখ, কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে ৩৫ কোটির বিপরীতে ১৫ লাখ, এসএমই খাতে ৭৫০ কোটির বিপরীতে ৩৫ কোটি ৭৫ লাখ এবং অন্যান্য খাতে ২১৫ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা অর্থবছরের শুরু জুলাই-আগস্ট মাসে বিতরণ হয়েছে ৩০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। রাজশাহীতে কৃষি ঋণ বিতরণের গতি বৃদ্ধির ফলে লক্ষ্যমাত্রা বছরের শেষে অনেকটাই পূরণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ কৃষক প্রণোদনা ঋণ সম্পর্কে জানেন না। সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণে তাদের তেমন আগ্রহও নেই। এছাড়াও সরকারি ব্যাংকে ঋণ গ্রহনে বেশ জামেলা পোহাতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবনতা থেকে বেরিয়ে সরকারি ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে রাজীও নন অনেকে।

রাজশাহীর মোহনপুর এলাকার মৎস্য চাষি ও হ্যাচারি মালিক সাবের বলেন, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযোগ করেছিলাম ঋণ নেওয়ার জন্য। পরে আর যাইনি। সোনালী ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকার আবেদন করেছি। আজ না কাল এরকম করে খালি ঘুরায়। তারা বলেছে, ৩০ লাখের আবেদন করলেও কিছু কম দিবে।

৪ শতাংশ সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান বলেন, করোনার মধ্যে আমার ২লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তারপর ঋণ পাওয়ার ঘোষণা শুনেছি। আমি কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগাযোগ করে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিব ভাবছি।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *