স্টকমার্কেট ডেস্ক :
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকার শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার স্থিতিশীল শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শেয়ারবাজারে সিকিউরিটিজের সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আইপিও, আরপিও এবং রাইট ইস্যুর প্রস্তাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আইনে।
মন্ত্রী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে আরো শক্তিশালী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর সংশোধন করা হয়েছে। ফলে ইউনিটধারীদের অনুমোদন সাপেক্ষে মেয়াদী স্কিমকে বে-মেয়াদী স্কিমে রূপান্তর করা যাবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের (স্কীমে) তহবিলের ন্যুনতম ২৫ ভাগ পাবলিক অফারের মাধ্যমে উত্তোলন করতে হবে।
স্কিমের সর্বশেষ ‘এনএভি (নেট অ্যাসেট ভ্যালু)-এর ভিত্তিতে নতুন ইউনিট ইস্যুর মাধ্যমে ফান্ডের মুনাফা বণ্টন, বা পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে।
মন্ত্রী বলেন, গুজবভিত্তিক বাজার প্রতিরোধে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিসার্চ অ্যানালাইসিস) রুলস, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বন্ড মার্কেট’ উন্নয়নে ‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (প্রাইভেট প্লেসমেন্ট অব ডেট সিকিউরিটিজ) রুল, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ এর আওতায় স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা হয়েছে। এটি স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০০৬ এর সংশোধনের মাধ্যমে বুকবিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল’ গঠন এবং তাতে একজন বিচারক (জেলা জজ) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস, ২০০৬-এর সংশোধনের মাধ্যমে রাইট ইস্যুকে আরও জবাবদিহীতার আওতায় আনা হয়েছে। এখন প্রিমিয়ামে কোনো কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করতে চাইলে আগের তিন বছরে বাণিজ্যিক কর্মক্রম এবং মুনাফার রেকর্ড থাকতে হয়।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে বিদেশী ব্রোকারেজ ফার্মকে প্রদেয় কমিশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিলাদি দাখিল সাপেক্ষে দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিদেশী প্রতিষ্ঠান এবং অ-নিবাসী বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের উপর আরোপিত শতকরা ১০ ভাগ ‘ক্যাপিটাল গেইন’ ট্যাক্স প্রত্যাহার, শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের ‘স্পনসর ও ডাইরেক্টর-দের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ ভাগ এবং ব্যক্তিগতভাবে পরিচালকদের ২ ভাগ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য পাবলিক ইস্যুতে ২০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। এছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে তাদের নেওয়া মার্জিন ঋণে আরোপিত সুদের ৫০ ভাগ মওকুফ, অবশিষ্ট সুদ একটি সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে তিন বছরে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।এ প্যাকেজের আওতায় বরাদ্দকৃত ৯শ’ কোটি টাকা থেকে ইতোমধ্যে ১ম কিস্তিতে ৩শ’ কোটি টাকা ১০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রাইভেট প্লেসমেন্টের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে কোনো কোম্পানি ১শ’ জনের বেশি ব্যক্তিকে প্লেসমেন্টে শেয়ার বরাদ্দ দিতে পারবে না। মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো মূলধনের সর্বনিম্ন ৫১ ভাগ প্যারেন্ট কোম্পানি থেকে এবং অবশিষ্ট অংশ অন্য যে কোনো উদ্যোক্তা থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর মূলধন বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘ মেয়াদে তারল্য সংকটের অবসান হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, উন্নত সার্ভেইল্যান্স সফটওয়্যার স্থাপনের মাধ্যমে ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’ সনাক্ত করা হচ্ছে এবং সে অনুসারে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ১০ বছরের ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেয়ার মার্কেটের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের সফলতার হার প্রায় শতভাগ।
সূত্র: বাসস
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এইচ