শেয়ারবাজার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই তিনি বাজার নিয়ে কোনো কথা বলতে এত দিন বিরত ছিলেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার বিএমবিএ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শেয়ারবাজার: বর্তমান হাল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী নিজেই এ কথা বলেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমি মন্তব্য করি না। কারণ, শেয়ারবাজার আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কয়েক দিন আগে একটা মন্তব্য করেছিলাম। আজ আবার করছি।
বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. আবদুল মান্নান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বিশেষ অতিথি ছিলেন।
কার্যকর শেয়ারবাজার গড়ে ওঠার জন্য সরকারের কাছে বেশ কিছু নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান এবং বক্তব্য দেন বিএমবিএ সহসভাপতি এম মোশাররফ হোসেন, মহাসচিব খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে একটা ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি চাইলে দক্ষ শেয়ারবাজার অপরিহার্য। পূর্বসূরিরা অনেক আগেই তা উপলব্ধি করেছেন। শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বয়স ২৫ বছর হয়ে গেলেও অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আইনকানুন করতে অনেক সময় লেগে গেল।
শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের কথা স্মরণ করে মুহিত বলেন, খুবই খারাপ লেগেছে যে দুটিই হয়েছে আওয়ামী লীগের সময়ে। তবে আওয়ামী লীগই শেয়ারবাজারের দিকে বেশি খেয়াল রেখেছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেন, আজকে বাজারে যে আস্থার দুর্বলতা, তার কারণ হচ্ছে জ্ঞানের অভাব, ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির অভাব। কী করে বিনিয়োগ করতে হয়, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই। শিগগির দেশব্যাপী ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে বলে জানান খায়রুল হোসেন।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির একীভূত হওয়া ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি জানান, ২০১৭ সালে আইন প্রণয়ন করে ২০১৮ সালে ‘ডেরিভেটিভস’ চালু করা হবে শেয়ারবাজারে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিএসইসির কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন, লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। বাজারের সূচককে ১০০০ বা ২০০০ সূচকে নিয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ নয়। শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হবে কোম্পানির মৌল ভিত্তি দিয়ে।
বলা হয়, কার্যকর শেয়ারবাজার গঠনের স্বার্থে বন্ড, ঋণপত্র ও ডেরিভেটিভস ইত্যাদি চালু করতে হবে। গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যেমন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) একারই রয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিডিবিএল ও অন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোরও বড় তহবিল রয়েছে। বাজারের স্বার্থে তারা ভূমিকা পালন করতে পারে।
বোনাস শেয়ার প্রকৃত লভ্যাংশ নয় উল্লেখ করে প্রবন্ধে নগদ লভ্যাংশকে উৎসাহিত করতে বলা হয়। বলা হয়, সঞ্চয়পত্রে সবার জন্য উচ্চ মুনাফা না রেখে শুধু জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সেকেন্ডারি মার্কেটে আনা যেতে পারে এবং পেনশন তহবিল তৈরি করা যেতে পারে, যার একটি অংশ আসতে পারে শেয়ারবাজারে।
কর দেওয়ার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করলেও অনেক ভালো কোম্পানি এখনো শেয়ারবাজারের বাইরে রয়েছে বলে প্রবন্ধে তথ্য দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেয়ারবাজারে ১৯৬৪ ও ১৯৭১ সালে নিজের বিনিয়োগের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা স্থাপনের অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমার ধারণা, ২০১৮ সালের দিকে অধিকতর কার্যকর শেয়ারবাজার গড়ে উঠবে দেশে এবং আমি আবার বিনিয়োগ করতে চাই।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ