স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
বিদ্যুৎ উৎপাদনে মিশ্র জ্বালানির সুবিধা পেতে অন্তত আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিত্র বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানা গেছে। তবে একবছরের মধ্যে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের আংশিক সুবিধা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার ২০১২ সাল থেকে মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারের ঘোষণা দিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিন্তু এক্ষেত্রে গত আট বছরেও খুব বড় সুবিধা আদায় করা সম্ভব হয়নি।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে কয়লাচালিত যেসব কেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর একটিও সফল হয়নি। তখন দেশের একটি প্রতিষ্ঠান দুটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি জমি ও অর্থসহ কোনও কিছুরই সংস্থান করতে পারেনি।
এরপর সরকার অন্য দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করে। সেই উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সফল হলেও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি পিজিসিবি’র লাইন নির্মাণে ব্যর্থতার কারণে এখনও পুরো সুফল ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে স্পট মার্কেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি সংমিশ্রণের বিষয়টি বেশি আলোচনায় এসেছে। একইসঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার দাম আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ফলে কার্যকর জ্বালানি সংমিশ্রণ সম্ভব না হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে।
অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ সামাল দিতে সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করলে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। অন্যদিকে সরকার দাম না বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিলে অর্থনীতি চাপে পড়বে। এতে স্বাভাবিকভাবে সরকারের অন্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরোটা উৎপাদনে এলেও এখন ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চালানো সম্ভব হচ্ছে। অন্য ইউনিটটি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ থেকে রাজধানীর আমিনপুরে লাইন নির্মাণের কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি পিজিসিবি। এর মধ্যে পদ্মার রিভার ক্রসিংয়ের কাজ করছে সেতু বিভাগ।
সেখানে চায়না মেজর ব্রিজ করপোরেশন পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে পাইলিং করে বেজ নির্মাণ করেছে। এরপর এর ওপর টাওয়ার নির্মাণ করবে পিজিসিবি। সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পায়রা কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পুরোটা চালানো সম্ভব হলে সেখানে ইউনিট প্রতি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কিন্তু এর বিপরীতে তরল জ্বালানি নির্ভর কেন্দ্র থেকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ ১০ টাকার চেয়ে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। তাই বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল, মাতারবাড়ি এবং রূপপুর চালু হলে আমরা একটি কার্যকর জ্বালানি সংমিশ্রণ পাবো। এতে করে আমরা জ্বালানির দাম বিবেচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারবো। কখনও এলএনজির দাম বেড়ে গেলে আমরা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো।
অন্যদিকে রূপপুর থেকে আমরা কমদামে পারমাণবিক বিদ্যুৎ পাবো। এর আগে আমাদের বাড়তি দরে এলএনজি কিনেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।’
সূত্রগুলো বলছে, আগামী ডিসেম্বরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আর রামপাল চালু হলেও সেই বিদ্যুৎ গ্রিডে তা সরবরাহ করার মতো অবকাঠামো নেই।
এছাড়া দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আরও ৬৬০ মেগাওয়াটের চাহিদা নেই। সমান ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার ছয় মাস পর।
এছাড়া মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালের জুনে। একই সময়ে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। এজন্য রূপপুরে জোরেশোরে কাজ করছে রুশ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
সব মিলিয়ে রামপাল এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে জ্বালানি সংমিশ্রণের আংশিক সুবিধা পাওয়া যাবে। আর মাতারবাড়ি ও রূপপুর চালু হলে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পাওয়া যাবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন উল্লেখ করেন, ‘মিশ্র জ্বালানির এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। এগুলো অনেক বড় হওয়ার কারণে বাস্তবায়নে কিছুটা সময় প্রয়োজন হবেই। আমরা এখন পায়রা থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাচ্ছি।
যদিও সঞ্চালন লাইনের কারণে পুরোপুরি পাচ্ছি না। কিন্তু দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। রামপালও এ বছরের শেষে না হলেও আগামী বছরের শুরুর দিকেই চলে আসবে।’
মহাপরিচালকের আশা, ‘তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে এখনই আমরা বিদ্যুৎ পাবো। এদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও দ্রুত চলছে। নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসবে বলে আশা করছি।’
স্টকমার্কেটবিডি.কম/