স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশের চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি, রেমিট্যান্স, তৈরি পোশাক, সেবা ও উৎপাদন খাত। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে এসব খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি প্রয়োজন। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন ১০ শতাংশের ওপরে। কিন্তু এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিদ্যমান চালিকাশক্তি ও প্রবৃদ্ধি দিয়ে সম্ভব নয়। নতুন চালিকাশক্তি লাগবে। এ চালিকাশক্তি কী হবে, তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদরা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক বিশেষ অধিবেশনে এমন মত দিয়েছেন তারা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম. এ সাত্তার মণ্ডল।
‘বিআইবিএম-এ বঙ্গবন্ধু জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে মুদ্রানীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ নিয়ে বিশেষ অধিবেশনটি (প্লেনারি সেশন) অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, সব ধরনের উদ্যোক্তার কাছে অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সে আলোকেই আমাদের মুদ্রানীতির কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স এই দুই খাত উন্নয়নের মাধ্যমে গত অর্ধশতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের উন্নয়নের কৃষিও অন্যতম ভূমিকা রাখছে। আর্থিক খাতে কৃষিকে নতুন করে তুলে ধরার সময় এসেছে। একটি সস্তা শ্রমের অর্থনীতি থেকে উৎপাদনশীল শ্রমে নিয়ে যেতে হবে। কভিড ধাক্কায় অনেক খাত পিছিয়ে পড়েছে। মানুষের মূল ঘাটতি চিহ্নিত করা দরকার এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণসহ আর্থিক সুবিধা বড় করপোরেটরা পাচ্ছেন। উদ্যোক্তাদের কাছে সেভাবে যায়নি। এখন সব পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য মুদ্রানীতির কাঠামো সেভাবেই পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দ্বারা প্রবৃদ্ধিতে যে ভূমিকা রাখছে, তা খাটো করে দেখার উপায় নেই। একটি উন্নয়নমূলক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নীতি সহায়তা ছাড়াও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন (এমএফআইএস) থেকে ক্ষুদ্র ঋণের অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা এখন এ রূপান্তরিত হয়েছে। আর্থিক খাতের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও আর্থিক খাতের সময়োপযোগী সহযোগিতার কারণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
ড. মোস্তফা কে. মুজেরি বলেন, বিগত ৫০ বছর ধরে আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি, রেমিট্যান্স, সেবা ও উৎপাদন খাত। উৎপাদন খাতের প্রায় সবটুকুই তৈরি পোশাক খাতের। আবার আমাদের অর্থনীতির ৫৫ শতাংশই সেবা খাতের। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে আমাদের কাছে সময় রয়েছে মাত্র ১০ বছর। কিন্তু এ লক্ষ্যে পৌঁছানো বিদ্যামান অর্থনীতির চালিকাশক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি চার থেকে পাঁচ শতাংশের বেশি উন্নীত করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান তৈরি পোশাক খাত দিয়েও তা সম্ভব নয়। নতুন চালিকাশক্তি লাগবে। সেবা খাত দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি আয় করা যায় না। এজন্য উৎপাদনশীল খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীল খাতের প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন মতো বাড়ানো সম্ভব। চীন উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি এক হাজার ৪০০ গুণ বাড়িয়েছিল ১৭ বছরের মধ্যে। আমাদের প্রয়োজন ১০ শতাংশের বেশি জিডিপির প্রবৃদ্ধি। এটি করতে উদ্যোক্তাদের কাছে অর্থ পৌঁছাতে হবে। এজন্য সেভাবেই মুদ্রানীতির কাঠামো সাজাতে হবে।
ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল বলেন, আমাদের দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছেই। একটি গোষ্ঠী শ্রেণির বড় হওয়ার প্রবণতা বেশি। বঙ্গবন্ধু সবার জন্য ভাবতেন। একটি বৈষম্যহীন দেশ গড়ার কথা বলেনছেন। এজন্য তিনি একটি পরিকল্পিত অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছেন সব সময়।
ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংক খাতের অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আর্থিক খাতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক হিসাবে বিবেচনা করেছেন। একই ধারাবাহিকতায় বিআইবিএম দেশের আর্থিক খাতের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও পরামর্শের চাহিদা মেটাতে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বিআইবিএমের মিরপুর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী, সহযোগী অধ্যাপক ড. আশরাফ আল মামুন প্রমুখ।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/