স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক:
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো ঠিকমতো নির্দেশ করেছেন। কিন্তু সেগুলো উত্তোরণে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি। বাজেটে শুল্ক প্রস্তাব ঠিকমতো করা হয়নি। সর্বোপরি বাজেটে সৃজনশীলতা ও সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেই বাজেটের পর্যালোচনা তুলে ধরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিডিপি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যম্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অবাস্তব। কিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে আটকে রাখা হবে তারও কোনো সঠিক পথ দেখানো হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশে আটকে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল বিকেলে তিনিও বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া তথ্য মতে, গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২৯ শতাংশ। মার্চ মাসে ছিল ৬.২৪ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৬.১৭ শতাংশ। গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতি এ পর্যায়ে আর ওঠেনি। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ৬.৪৪ শতাংশে।
এ অবস্থার কথা তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজারে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম, তার সঙ্গে সরকারের তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। কোন জাদুর কাঠি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, সে পথ দেখাননি অর্থমন্ত্রী।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে দেখা যায়, রাজস্ব আদায়, বেসরকারি খাতে ঋণ, রপ্তানি ভালো অবস্থানে আছে। নেতিবাচক দিকে আছে কিছু সূচক। এর মধ্যে রিজার্ভ নিচের দিকে নামছে। ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। মুদ্রার অবনমন ঘটছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। তার পরও জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজেটে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য বাড়বে বলা হয়েছে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব সেটা বোধগম্য নয়। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫.৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এটাও বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। ঘাটতি পূরণে বিদেশি নির্ভরতা বাড়ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় রাখার জন্য যতটুকু উদ্যোগ আছে, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ দেখানো হয়েছে তাঁদের প্রতি, যাঁরা অবৈধভাবে টাকা বাইরে নিয়ে গেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে চ্যালেঞ্জগুলো ঠিকমতো বলা হয়েছে কিন্তু মোকাবেলার কথা বলা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী অসুখের লক্ষণ ধরতে পেরেছেন। কিন্তু অসুখ সারানোর জন্য যে ওষুধ দরকার হয় তা দেননি। তাঁর কাছে ওই ওষুধ পর্যাপ্ত নেই বা ওষুধ জানা নেই। কারণ যে চ্যালেঞ্জগুলোর কথা বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা অপ্রতুল বা অপর্যাপ্ত।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভর্তুকির ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থাপনা দরকার ছিল অর্থমন্ত্রী সেখানে তাঁর ঠিক ডোজই দিয়েছেন। তিনি ভর্তুকি বাড়িয়েছেন। সঙ্গে এটাও বলেছেন, তার পরও বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খাতের মূল্য সমন্বয় না করে তিনি টিকতে পারবেন না। তার মানে, ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা আসতে পারে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/