আইপিওর অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

bbনিজস্ব প্রতিবেদক :

শেয়ারবাজার থেকে কোম্পানির আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) খরচ কমিয়ে আনার বিষয়েও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নজর দিতে হবে বলে মনে করছেন ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রকরা। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন, যেখানে শেয়ারবাজার বিষয়ে এমন পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতির বিস্তারিত প্রতিবেদনে শেয়ারবাজার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের অতিমূল্যায়ন ও ধসের পর দেশের পুঁজিবাজার এখন স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশে চর্চিত উত্কৃষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করে ব্যাংকের মূলধনভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতের এক্সপোজারও নামিয়ে আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো বলে, ২০১৬ অর্থবছরে দেশের শেয়ারবাজার বেশ স্থিতিশীল ছিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্স, বাজার মূলধন, মূল্য আয় (পিই) অনুপাতে যার প্রতিফলন দেখা যায়। ২০১৬ সালের জুন শেষে ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫০৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে, এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৩ দশমিক ১ পয়েন্টে। ডিএসইর প্রধান সূচকটি এক বছরের ব্যবধানে সামান্যই কমেছে। গত মে মাসে বাজার মূলধন ছিল বাংলাদেশের জিডিপির ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, জানুয়ারিতে যা ছিল ১৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। মে মাসে ডিএসইর পিই অনুপাত দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৩৩-এ, জানুয়ারিতে যা ছিল ১৫ দশমিক ২২।

বাজারের এ অবস্থায় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এখন শেয়ার ইস্যুতে কোম্পানিগুলোর খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। এছাড়া করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আরো সহজে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে পারে, যে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে মুদ্রানীতি প্রতিবেদনে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বড় আইপিওর চেয়ে ছোট আইপিওতে ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যয় তুলনামূলক বেশি। আইন সংশোধনের পর এখন যেসব কোম্পানি অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করে, তাদের ক্ষেত্রে আইপিও ব্যয় বেশি। সাধারণত অভিহিত মূল্যে আইপিওর ক্ষেত্রে আইপিও ব্যয় মোট ইস্যু মূল্যের ৬ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রিমিয়ামে আসা আইপিওর ক্ষেত্রে এ ব্যয় গড়ে ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে ইস্যু ব্যবস্থাপনা ফি আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়-দায়িত্বও বেড়েছে। সংশোধিত আইনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইপিওর কনসেন্ট ফিও অনেক বাড়িয়েছে।

আইন সংশোধন ও পদ্ধতিগত জটিলতায় বিলম্বের কারণে শেয়ারবাজারে সম্প্রতি আশানুরূপ সংখ্যায় আইপিও অনুমোদন হচ্ছে না। আবার সরকারি সিদ্ধান্তে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসছে না। ২০০৯ সালের পর কোনো বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।

গতকালের মুদ্রানীতি প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকার সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পেনশন সঞ্চয় স্কিম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে, যা নতুন একটি পেনশন ফান্ড রেগুলেটরের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আর্থিক ও শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় আহরণ সহজ হবে, যার সুফল পাবে বাজার।

প্রতিবেদনে ব্যাংকের মূলধনভিত্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত বিনিয়োগ নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রসঙ্গত, কোনো শেয়ার বিক্রি না করে শেয়ারবাজারে ১৩ ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ আইনি সীমায় নামিয়ে আনতে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন বৃদ্ধির নীতিগত সহায়তা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকের পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি ও আরো দরপতনের আশঙ্কা প্রশমিত হয়।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *