একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচার (নেটিং বা সমন্বয়) সুবিধা পুনর্বহালের দাবি অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর ফলে একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার একবার বেচে দিয়ে আবার কিনতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। একই সঙ্গে মার্জিন ঋণের বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঞ্চিতি সংরক্ষণে বিশেষ ছাড়ের মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বুধবার বিএসইসির ৫৩৪তম নিয়মিত সভায় এ সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নেটিংসংক্রান্ত বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাঠানো প্রস্তাবটিতে কমিশন সম্মতি জানিয়েছে। ওই বিষয়টি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এর ফলে ‘এ’, ‘বি’, ‘জি’ ও ‘এন’ ক্যাটাগরির একই শেয়ারে নেটিং করা যাবে।
জানা গেছে, লেনদেনে এই সুবিধা দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ার একবার বিক্রি করে আবার কিনতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে শেয়ার ও অর্থ দুটিই ম্যাচিউরড (পরিপক্ব) থাকতে হবে।
গত ২৯ ডিসেম্বর স্টেকহোল্ডারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একই দিনে একই কোম্পানির শেয়ারে নেটিং সুবিধার প্রস্তাব দেয় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এর আগে আগস্টে অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিএসইসিতে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়।
এখন পর্যন্ত দেশের দুই বাজারে নেটিং সুবিধার আওতায় কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে ওই দিনই সমপরিমাণ মূল্যের অন্য কোনো সিকিউরিটিজ কেনা যায়। শুধু ‘জেড’ ক্যাটাগরি ছাড়া অন্যসব ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানি কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এ আর্থিক সমন্বয় সুবিধা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে গত ১১ ডিসেম্বর ডিএসইতে নতুন স্বয়ংক্রিয় লেনদেনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর নেটিং সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারী ও স্টেকহোল্ডাররা নেটিং সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানান।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সুবিধাটি পুনরায় চালু হলে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় একই শেয়ার নেটিংয়ের সুবিধা রয়েছে, যার আওতায় লেনদেনে অংশগ্রহণকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দিনে একাধিকবার কেনা-বেচা (ডে ট্রেডিং) করে একটি শেয়ার থেকেই মুনাফা করতে পারে, যা বাজারের গতিশীলতা বাড়ানোর পক্ষে সহায়ক। বিনিয়োগকারীর কাছে অর্থ ও শেয়ার যদি ম্যাচিউরড থাকে, তাহলে নেটিংয়ের সুবিধা দেওয়া উচিত। এতে লেনদেন বেড়ে দেশের শেয়ারবাজারে একটি ইতিবাচক ধারা তৈরী হবে।
সঞ্চিতি সংরক্ষণের বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীদের এ্যাকাউন্টে আটকে থাকা মার্জিন ঋণের বিপরীতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সঞ্চিতি সংরক্ষণে বিশেষ ছাড়ের সময়সীমা ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ২০১৫ সালে পাঁচটি ত্রৈমাসিক কিস্ত্রিতে সমান অংশে বা ২০ শতাংশ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা যাবে।
চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মার্জিন ঋণের বিপরীতে শতভাগের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করে কিস্তিতে সঞ্চিতি রাখার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অধিকাংশ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ট সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন ও স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি আরও এক বছর সময় বাড়িয়েছে।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারে মন্দাভাবের কারণে কয়েক বছর ধরে বেশীরভাগ মার্চেন্ট ব্যাংকই যথেষ্ট মুনাফা করতে পারেনি। এ জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিএসইসির কাছে কিস্তিতে সঞ্চিতি রাখার সুযোগ চায়। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কিস্তিতে সঞ্চিতি রাখার সুযোগ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এতে বলা হয়, স্টক ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ারের পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়কৃত ক্ষতির (আনরিয়েলাইজড লস) বিপরীতে রক্ষিতব্য সঞ্চিতি পাঁচটি ত্রৈমাসিক সমান অংশে (২০ শতাংশ করে) সংরক্ষণ করতে পারবে। তবে এ সুবিধা কেবল ২০১২ সালের উদ্ভূত পুনর্মূল্যায়নজনিত ক্ষতির বিপরীতে সঞ্চিতির জন্য প্রযোজ্য হবে। এর পরের সব সঞ্চিতি যথানিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে। স্টক ব্রোকার গ্রাহকদের অনুকূলে বণ্টন করা মার্জিন ঋণের মাধ্যমে কেনা শেয়ারের পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে রক্ষিতব্য সঞ্চিতি ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত একই ভাবে সংরক্ষণের ঐচ্ছিক সুবিধা দেওয়া হয়।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এএআর