গত কয়েক দিন ধরেই পড়ছিল শেয়ার বাজার। মঙ্গলবার একেবারে ধস নামল তাতে। এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়ে গেল ৫৩৮.১২ পয়েন্ট। ফের নেমে এল ২৬ হাজারের ঘরে। বাজার বন্ধের সময় দাঁড়াল ২৬,৭৮১.৪৪ অঙ্কে। গত এক বছরের মধ্যে ভারতের বাজারে এক দিনে এত বড় পতন হয়নি।
পাল্লা দিয়ে পড়ছে টাকার দামও। এ দিন তা নেমেছে ৫৯ পয়সা। এক ডলার দাঁড়িয়েছে ১৩ মাসের সবচেয়ে নীচে।
প্রসঙ্গত, শেয়ার বাজারের পতন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকেই। এক সপ্তাহেই সেনসেক্স পড়েছে ১০৪৯.৬৬। ফলে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে বাজার।
শুধু ভারত নয়, বাজার পড়ছে বিশ্ব জুড়েই। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম হু হু করে নেমে আসায় তৈরি হয়েছে নতুন আর্থিক সঙ্কট। রাশিয়া, নাইজিরিয়ার মতো তেল রফতানি নির্ভর দেশের অর্থনীতি পড়েছে ঘোর বিপাকে। তার উপর আবার উৎপাদন ঢিমে হয়েছে চিনের কল-কারখানায়। আর এই সব কিছুর জন্যই দোলাচল তৈরি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ার বাজারে।
বিশ্ব জুড়ে শেয়ার বাজারে এই টানাপড়েনের প্রভাব এড়াতে পারেনি ভারতের বাজারও। বরং এখানে সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে দেশীয় অর্থনীতিতেও একের পর এক খারাপ খবর। শিল্প সঙ্কুচিত। সোনা আমদানি বিপুল বৃদ্ধির হাত ধরে বাণিজ্য ঘাটতি ফের চড়া। টাকার দাম বাড়ছে। কমার লক্ষণ নেই বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদও। সব মিলিয়ে তাই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে লগ্নিকারীদের মনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের টানা পতন তারই প্রতিফলন।
অনেকে আবার মনে করছেন, ঋণনীতিতে সুদ বাড়াতে পারে মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেড রিজার্ভ। যে কারণে সোনার দাম ইতিমধ্যেই পড়েছে। বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি এ বার মার্কিন মুলুকের দিকে সরে যাবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে অনেকের। বিশেষত যেখানে ভারতীয় অর্থনীতির নানা সমস্যা ইতিমধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করছে তাদের।
অবশ্য বিশেষজ্ঞ অজিত দে মনে করেন, “তেলের দাম কমায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হলেও ভারতের তাতে অসুবিধার কোনও কারণ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও লগ্নিকারীদের অনেকে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বেচছেন। ফলে পড়ছে সূচক। আমার আশা, এই অবস্থা দীর্ঘকাল চলবে না।”
অজিতবাবুর সঙ্গে একমত বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তাঁদের মতে, ভারতের বাজার নিয়ে এখনও আশান্বিত হওয়ার কারণ যথেষ্ট। কেন্দ্র সংস্কারের ঘোষণাগুলি রূপায়িত করতে পারলে অর্থনীতি ফের গতি পাবে। তবে এই মুহূর্তে ভারতের বাজারে যে বিষয়টি লগ্নিকারীদের কপালে চিন্তার রেখা ফেলেছে, তা হল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িক।
সূত্র- আনন্দবাজার
স্টকমার্কেটবিডি.কম/তরি/এলকে