হাইকোর্টের নির্দেশে চিটাগাং সিমেন্টের মামলা আবারো স্থগিত

courtনিজস্ব প্রতিবেদক :

১৯৯৬ সালে শেয়ার কেলেঙ্কারিতে আলোচিত চিটাগাং সিমেন্ট (বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট) মামলায় আবারো ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে এ স্থগিতাদেশের বিষয়টি জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী।

বৃহস্পতিবার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালকে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত মামলাটির ওপর আরও ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশের কপি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার জন্য সময়ের আবেদন করেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ আবেদন মঞ্জুর করে স্থগিতাদেশের কপি দাখিলের জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। এ দিন আসামিদের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, বৃহস্পতিবার চিটাগাং সিমেন্ট মামলার তারিখ ছিল। আসামিপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মামলার ওপর উচ্চ আদালত গত ৮ সেপ্টেম্বর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তবে স্থগিতাদেশের কপি না পাওয়ায় ট্রাইব্যুনালে তা দাখিলের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর স্থগিতাদেশের কপি ট্রাইব্যুনালে দাখিলের আদেশ দেন।

এর আগে যুক্তি-তর্ক শেষে ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর রায় ঘোষণার জন্য ওই বছরের ৮ নবেম্বর দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু রায় ঘোষণার মাত্র ৫ দিন আগে ৩ নবেম্বর মামলাটির কার্যক্রমের ওপর উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এ মামলার অন্যতম আসামি বুলবুল সিকিউরিটিজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম শহিদুল হক বুলবুলের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন আদালত। ফলে মামলাটির রায় ঘোষণা করতে পারেননি ট্রাইব্যুনালের বিচারক। ৬ মাসের পর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দ্বিতীয় দফায় ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ায়।

স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের কার্য তালিকায় মামলাটি রাখা হয়েছিল। এ মামলার আসামিরা হলেন ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান, টি কে গ্রুপের মালিক আবু তৈয়ব এবং বুলবুল সিকিউরিটিজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম শহিদুল হক বুলবুল।

মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা ১৯৯৬ সালে চিটাগাং সিমেন্টের পরিচালক ছিলেন। ভারতীয় ও ইরানি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে বলে আসামিরা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ার মূল্য প্রভাবিত করেন। এ ব্যাপারে পরবর্তীকালে চিটাগাং সিমেন্টের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর কোম্পানির একজন পরিচালক বড় অংকের শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে কী পরিমাণ ও কোন ব্যক্তি এ কাজ করেছেন তা ১৯৯৬ সালের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

এ ছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রকিবুর রহমান এবং এ এস শহিদুল হক বুলবুল পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স-১৯৬৯ এর ১৭ ধারা অনুসারে কারসাজি বলে মনে করে গঠিত তদন্ত কমিটি।

১৯৯৬ সালের শেয়ার কারসাজির ঘটনা উদঘাটনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তিন মাস পর ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে চিটাগাং সিমেন্টের শেয়ার কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। আর এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালের ৪ মে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে মামলা করে বিএসইসি। মামলাটি পরবর্তীকালে বিচারের জন্য প্রথম অতিরিক্ত দায়রা আদালত ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। এই আদালতে থাকাকালীন মামলাটির বাদীর সাক্ষ্য শেষ হয়। পরবর্তীকালে মামলার আদালত পরিবর্তনের নির্দেশ এলে বাদীপক্ষের সম্মতিতে নিম্ন আদালতের আদেশের ওপর স্থগিত আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর বিএসইসির ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলাটি এই আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *