বুধবার থেকে নন-মার্জিনে শাহজিবাজার লেনদেনও স্পটে

sahjibazerনিজস্ব প্রতিবেদক :

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি শাহজিবাজার পাওয়ারের শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত মঙ্গলবার এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঋণসুবিধা বন্ধের পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের জন্য স্পট মার্কেট বা নগদ লেনদেনের বাজারে স্থানান্তর করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি জানায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, কোম্পানিটির বিষয়ে নেওয়া এ দুটি সিদ্ধান্ত আজ বুধবার থেকেই কার্যকর হবে। অর্থাৎ আজ থেকে শাহজিবাজারের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারী ঋণসুবিধা পাবেন না।

চলতি বছরের ১৫ জুলাই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩০০ টাকারও বেশি বেড়েছে। লেনদেনের প্রথম দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এটির শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম ছিল সাড়ে ৩৬ টাকা। আর গতকাল দিনের শেষে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩৩৯ টাকা।

বর্তমানে সাধারণ বাজারে একটি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতে তিন দিন (টি+২) সময় লাগে। কিন্তু স্পট মার্কেটে এক দিনে (টি+০) লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারী আজ স্পট মার্কেট থেকে কোনো শেয়ার কিনলে আগামীকালই তা আবার বিক্রি করতে পারবেন। এর ফলে সেখানে শেয়ারের সরবরাহ বেড়ে যায়। অন্যদিকে ঋণসুবিধা বন্ধ থাকলে তাতে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে টাকার প্রবাহ কমে যায়। তাই একদিকে টাকার প্রবাহ কমিয়ে অন্যদিকে শেয়ারের সরবরাহ বাড়িয়ে শাহজিবাজারের শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।

তালিকাভুক্তির পর থেকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশে ১১ আগস্ট থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত করে দেয়। এ সময় অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্যোগে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করানো হয়। তাতে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস (আর্নিং পার শেয়ার) কমে যায়।

তদন্ত ও বিশেষ নিরীক্ষা শেষে গত ২০ অক্টোবর কোম্পানিটির লেনদেনের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। ২০ অক্টোবর থেকে সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত ২১ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫০ টাকা। ২০ অক্টোবর প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৮৯ টাকা ২০ পয়সা।

এদিকে হিসাব কারসাজির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার দায়ে শাহজিবাজারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) পাঁচ পরিচালককে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে চার পরিচালকের প্রত্যেককে ১০ লাখ করে ৪০ লাখ টাকা এবং এমডিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ জরিমানা আদায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

স্থগিতাদেশ শেষে পুনরায় লেনদেন শুরুর পরও এটিরও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। এ কারণে দ্বিতীয় দফায় তদন্তের উদ্যোগ নেয় বিএসইসি, যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তদন্তের পাশাপাশি গতকাল এটির মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে ঋণ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া কোনো ব্রোকারেজ হাউস কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনে সীমার অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে থাকলে তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে আজ থেকে লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য নিজ নিজ স্টক এক্সচেঞ্জে পাঠাতে বলা হয়েছে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এলকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *