আস্থার অভাবে ক্ষুদ্রবিমা কার্যক্রম নিয়ে বিপাকে বিমা কোম্পানিগুলো

imagesনিজস্ব প্রতিবেদক :

বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি অনাস্থা, সঠিক নীতিমালার অভাব, তদারকির অভাব, প্রতিষ্ঠানের লাভ কম হওয়া, আইনগত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষুদ্রবিমা কার্যক্রম অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে। জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এ তথ্য জানিয়েছে।

জীবন বিমা খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১২ সালে ক্ষুদ্রবিমার গ্রাহক ছিল ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৬। ২০১৩ সালে গ্রাহকসংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৫। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখ ২৬ হাজার ৬৪২। ২০১২ সালের চেয়ে ১৪ সালে ক্ষুদ্রবিমা গ্রাহক কমেছে চার লাখ ১৯ হাজার ১৪ জন।

ক্ষুদ্রবিমা গ্রাহক কমে যাওয়া প্রসঙ্গে আইডিআরএর সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, বিদেশে ক্ষুদ্রবিমা খুব জনপ্রিয়। এজেন্টদের কমিশন খরচ কম। আমাদের দেশে কোম্পানিগুলোর দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা এবং দক্ষ এজেন্ট না থাকায় মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক প্রতারিত হয়। এতে গ্রাহকরা আস্থা হারিয়ে ফেলছে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র বিমাকে চাঙ্গা করতে এজেন্টদের বিমার সঠিক ধারণা, প্রশিক্ষণ দেওয়া, দক্ষতা বাড়ানোসহ আরো কিছু উদ্যোগ নিয়ে আইডিআরএ কাজ করছে। এ জন্য কোম্পানিগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বিমা কোম্পানিরগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০১২-১৪ সাল পর্যন্ত পলিসি বিক্রিতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছে। তবে এই সময়ে বেশির ভাগ জীবন বিমা কোম্পানির পলিসি বিক্রিতে ধস নেমেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে ক্ষুদ্র বিমায় পলিসির সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৬টি, ২০১৩ সালে ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৫টি। তবে ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩টিতে।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল ৯ লাখ ৯৮টি। ২০১৩ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭৬টি। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৫টি।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জীবন বিমা করপোরেশনের ২০১২ সালে পলিসির সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯০ হাজার ৮৯টি। ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ১১৬টি কমে পলিসি দাঁড়ায় তিন লাখ ৭২ হাজার ২৩৭টি। ২০১৪ সালে ৩৫ হাজার ৯৬৮টি পলিসি কমে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৪ হাজার ১২১টিতে।

ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে ক্ষুদ্রবিমায় মোট পলিসি ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩১৯টি। ২০১৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৫২ হাজার ৭৪৬টি। আর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন লাখ ৮২ হাজার ১৮২টিতে।

মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল ৬০ হাজার ৫৩৪টি। ২০১৩ সালে প্রায় ১২ হাজার পলিসি বেড়ে দাঁড়ায় ৭২ হাজার ৭২৭টি। তবে ২০১৪ এসে ৩২ হাজারের বেশি পলিসি কমে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৪৫১টি।

পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৯৪৭টি। ২০১৩ সালে পলিসি ছিল এক লাখ ২৪ হাজার ৮৬৫টি। ২০১৪ সালে ৫৮ হাজার ৯৫২টি পলিসি কমে দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৯৯৫টি।

প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল ৩০ হাজার ৮২৫টি। ২০১৩ সালে ২২ হাজার ৩২১টি ও ২০১৪ সালে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫৪৭টি।

পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল ২৯ হাজার ১৩২টি। ২০১৩ সালে পলিসি ছিল ১৬ হাজার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৭৬২টি।

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালের চেয়ে ২০১৩ সালে পলিসি কমে ৩৯৫টি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৪ সালে পলিসি বেড়েছে দুই হাজার ৪৭টি।

রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে ছিল ২৩ হাজার ২৪২টি, ২০১৩ সালে ২১ হাজার ৩৮ এবং ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫৬টি।

সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ছিল ৪৮ হাজার ৭৫৮টি। ২০১৪ সালে দাঁড়ায় ২২ হাজার ১১৫টি।

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০১২ সালে পলিসি ১৭ হাজার ৯৫০টি, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ৪৩২ ও ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৬৫৭টি। অর্থাৎ ২০১২ সালের চেয়ে ২০১৪ সালে কমেছে সাত হাজার ২৯৩টি।

বেশির ভাগ কোম্পানির অনেক পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও তাদের নতুন গ্রাহকে রূপান্তর করা যায়নি। নতুন পলিসি করে শূন্য ঘর পূরণ করাও যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যমান ক্ষুদ্র বিমার গ্রাহক দিন দিন কমেই চলেছে। এ পরিস্থিতে অস্তিত্বের হুমকিতে পড়েছে এই ক্ষুদ্র বিমা কার্যক্রম।

ক্ষুদ্র বিমা কমার কারণ সম্পর্কে মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী মো. শাহ আলম বলেন, জীবন বিমা পলিসি কমে গেছে বিষয়টা এমন নয়। ক্ষুদ্র বিমা কমেছে। আমাদের দেশে ক্ষুদ্র বিমা লাভজনক পলিসি না। এজেন্টদের এর প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কারণ ১০০ টাকার একটি প্রিমিয়াম কালেকশন করে ১০ টাকা কমিশন থাকে। কিন্তু ওই কমিশন আনতে রিক্সা ভাড়া লাগে ৪০ টাকা। এমন কারণে তারা আগ্রহ হারাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, মানুষের আয়-রোজগার বেড়েছে। আগে যারা মাসিক ১০০ টাকা জমা রাখত, এখন তারা এককালীন ছয় হাজার টাকা প্রিমিয়াম খুলছে। তা ছাড়া ক্ষুদ্র বিমা গ্রাহকদের হিসাব রাখা বাবদ যে খরচ হয় তার ন্যূনতম খরচও ওঠে না। এজেন্টদের না পোষানোর কারণে প্রিমিয়াম সংগ্রহে অনিহা দেখা যায়। এতে কোম্পানির বদনাম হয়, অন্যদিকে গ্রাহকদের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে সব কোম্পানি একক বিমার দিকে ঝুঁকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *