ঋণের বোঝা নিয়ে ধরাশয়ী ঢাকা ডায়িং

dhakaনিজস্ব প্রতিবেদক :

ব্যাংকঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারছে না বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি দ্য ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড থেকে নেয়া বিশাল অঙ্গের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতায় ঋণখেলাপি হয়ে গেছে সম্প্রতি রাইট শেয়ার ইস্যু করা প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অনুসারে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ১০০ শ্রেণীকৃত ঋণগ্রহীতার তালিকার ৩ নম্বরেই রয়েছে ঢাকা ডায়িংয়ের নাম।

৩০ জুন ২০১৪ সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঢাকা ডায়িংয়ের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ঋণ ১২১ কোটি ১০ লাখ টাকা। এসব ঋণের সিংহভাগই ২০১১ সালে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছিল। নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখার কাছে ঢাকা ডায়িংয়ের সুদসহ মোট দেনা দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর বাইরে সোনালী ব্যাংকের কাছেও বড় অঙ্কের দেনা রয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে কোম্পানির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সময়মতো ব্যাংকঋণও পরিশোধ করতে পারেনি। তারা ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন জানিয়েছে। আমরাও বিষয়টি বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছি।

কোম্পানির সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, অগ্রণী ব্যাংকের কাছে তাদের মেয়াদি ঋণ ৫৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এছাড়া ক্যাশ ক্রেডিট হিসাবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ রয়েছে আরো ১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১১ সালে নেয়া এ ঋণ মোট ২৭ কিস্তিতে পরিশোধ করার চুক্তি ছিল। এসব ঋণের বার্ষিক সুদ ১৬ শতাংশ।

কিন্তু নিয়মিত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণখেলাপির তালিকায় উঠে এসেছে ঢাকা ডায়িং ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। বর্তমানে নিজস্ব মুনাফা থেকে ব্যাংকঋণ পরিশোধেরও সক্ষমতা নেই কোম্পানিটির। সর্বশেষ হিসাব বছরে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ আয় থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হলে কোম্পানিটি লোকসানে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এরই মধ্যে দুবার রাইট শেয়ারের প্রস্তাব দিলেও তা নাকচ করে দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
জানা গেছে, ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বিএসইসিতে ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) ইস্যু করা হালনাগাদ প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি। ফলে ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও কারখানা সম্প্রসারণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রাইট শেয়ারের আবেদন জানালেও তাদের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন রুলস (রাইট ইস্যু) ২০০৬-এর ৩(এফ) ও ৩(জি) ধারা পরিপালনে ব্যর্থ হওয়ায় রাইট শেয়ারের আবেদন গ্রহণ করেনি বিএসইসি।

রাইট ইস্যু রুলস ৩(এফ) অনুসারে, কোনো ইস্যুয়ার কোম্পানি কিংবা এর পরিচালকরা ঋণখেলাপি হতে পারবেন না। অন্যদিকে ৩(জি) ধারা অনুসারে যদি কোম্পানি প্রিমিয়ামে রাইট ইস্যু করতে চায় তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে অবশ্যই মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণমান প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা ডায়িং।

এদিকে শ্রম আইন অনুসারে কোম্পানির হিসাব বছর শেষে পরবর্তী নয় মাসের মধ্যে কর্মীদের মুনাফার অংশ বণ্টনের বিধান থাকলেও তা পরিপালন করছে না ঢাকা ডায়িং। বছর বছর মুনাফা করলেও কর্মীদের ভাগ দেয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করছে না কোম্পানি। এ নিয়ে কোম্পানির ২০১৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে আপত্তি তুলে ধরেছে কোম্পানিটির বহিরাগত নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান তাদের মন্তব্যে উল্লেখ করে, শুরু থেকেই মুনাফায় শ্রমিকদের ভাগ ও কল্যাণ তহবিলের পুঞ্জীভূত অর্থ বণ্টন করা হয়নি। এ তহবিলে পুঞ্জীভূত অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। কোম্পানির কল্যাণ তহবিল গঠন এবং তা বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর সংশ্লিষ্ট ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি।

এছাড়া কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হিসাব করতে বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করেনি ঢাকা ডায়িংয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সম্পদের রেজিস্টার্ড বই সংরক্ষণেও কোম্পানি আইন অনুসরণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৪ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ হিসেবে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১ টাকা ২ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) ২৬ টাকা ৫৮ পয়সা। এছাড়া চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪৫ পয়সা। বর্তমানে এ কোম্পানির শেয়ার ১৩ টাকা ৮০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে।

কোম্পানিটি ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এর অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ১১২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩০ দশমিক ২৩ শতাংশ, ২২ দশমিক ১৯ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও দশমিক ৪৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এএআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *