ঋণ পরিশোধে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চায় পোশাক মালিকরা

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

ব্যাংকঋণ পরিশোধে আরো সময় চেয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে সংগঠন দুটি। চিঠিতে ঋণ পরিশোধ না করলেও যাতে খেলাপি না করা হয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সুবিধা চালু রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ও বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগ অর্জিত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সরকার এ খাতের উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সর্বদাই সহানুভূতিশীল ও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। এছাড়া বর্তমানে করোনাভাইরাস অতিমারীর সময় সরকার তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতকে আর্থিক ও নীতিসহায়তা প্রদান করে এ খাতকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

সংগঠন দুটি বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন হ্রাস পাবে এবং তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে—এ আশা সরকারসহ সব উদ্যোক্তার ছিল। কিন্তু কভিড-১৯ প্রকোপ না কমায় পোশাক উদ্যোক্তারা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। বিদেশী ক্রেতারা একদিকে ক্রয়াদেশ প্রদান শিথিল করেছে। অন্যদিকে যেসব পণ্য এরই মধ্যে রফতানি করা হয়েছে, তার বিপরীতে অনেক ক্ষেত্রে রফতানি মূল্য প্রদান দীর্ঘায়িত করেছে। এ রকম প্রতিকূলতার মাঝেও উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এ খাতের কর্মসংস্থান তৈরি অব্যাহত রেখেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ অর্থাৎ প্যাকেজিং শিল্প, অ্যাকসেসরিজ, ব্যাংক, বীমা, পরিবহন ইত্যাদি নানা ধরনের সহযোগী ছোট-মাঝারি-বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত। প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পে কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে তা এ খাতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতা ও কাপড়ের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, রফতানি আদেশের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় স্পিনিংগুলো সুতার মূল্য বাড়াতে থাকে। সুতার এ বৃদ্ধির হার বিবেচনায় নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে পোশাকের মূল্য নিয়ে সমঝোতা করা এবং ক্রয়াদেশ ধরে রেখে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে অন্যান্য কাঁচামালেরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতা ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পোশাকের রফতানি মূল্যে তার প্রতিফলন হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক রফতানি আয় কিছুটা বাড়লেও পোশাকের প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধি পায়নি। বরং কিছু কিছু পোশাকের ক্ষেত্রে হ্রাস পেয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা টিকে থাকার জন্য সরাসরি দৃশ্যমান লোকসান দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখছে। ফলে তারল্য সংকট ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকরা এ শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিনিয়োগ, পরিস্থিতি ও শ্রমিকের মজুরি প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েও গভীর উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। তারা বলছেন, এ মাসেই ষাণ্মাসিক ব্যাংক ক্লোজিং ও আগামী মাসে ঈদুল আজহা সমাগত। এ সময়ে উদ্যোক্তাদের শ্রমিকের বেতন-ভাতা, বোনাস ইত্যাদি প্রদান করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সব ধরনের ঋণের বিপরীতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দাবি করেছে তারা। করোনাভাইরাস অতিমারীর প্রভাব মোকাবেলা করে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত যাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা ধরে রাখতে পারে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রাখতে পারে, সেজন্য এ সুযোগ চেয়েছেন পোশাক শিল্প মালিকরা।

এর আগে ঋণ পরিশোধে সময় চেয়ে ১৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে ঋণ পরিশোধে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে এ চিঠি দেন। সূত্র : বণিক বার্তা

স্টকমার্কেটবিডি.কম/আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *