এনবিআরের প্রাক বাজেট আলোচনা, প্রস্তাবনা আসছে ই-মেইলে

NBR-logoস্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ এলেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যায়। কারণ তখন থেকেই শুরু হয় ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে সংস্থাটির রাজস্ব সংলাপ, তথা প্রাক বাজেট আলোচনা। এমনকি প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুদফা করে অংশীজনদের সঙ্গে এনবিআরের রুদ্ধদার বৈঠক চলে। সেই বৈঠকে কোন কোন খাতে রাজস্বের কী কী পরিবর্তন আসবে সে বিষয়ও কিছুটা নির্ধারণ হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এর কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে চলছে লকডাউন। ফলে এনবিআরের প্রাক বাজেট আলোচনা আপাতত বন্ধ। যার কারণে নেই কর্মকর্তাদের ব্যস্ততা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার করোনার কারণে ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে কোন বৈঠক হবে না। তবে ব্যবসায়ী অংশীজনদের যেসব প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো ই-মেইলে নেওয়া হচ্ছে। মানে বৈঠকে পরিবর্তন এসেছে।

বাজেট আলোচনা বিষয়ে জানত চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান বাজেট সমন্বয়কারী আবু নূর রাশেদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে বৈঠকে আলোচনা হলেও প্রতিটি ব্যবসায়ী সংগঠন বা অংশীজনরা একটি লিখিত দিতেন। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করতাম। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনাও হতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে আমরা সেটি করতে পারেনি। তবে প্রথম দিকে কিছু সংগঠনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তবে যখন থেকে বৈঠক বন্ধ করা হলো তখন ই-মেইলে প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে আমরা পলিসি বিভাগে দিয়ে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৫০-৬০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রস্তাবনা পেয়েছি। এটি বলা যায় ভালো। তবে এফবিসিসিআই এখনও তাদের প্রস্তাবনা দেয়নি। তারা বলেছে, দ্রুতই তাদের প্রস্তাবনাগুলো দিয়ে দেবে। ধারণা করছি এই মাসের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘অনেকেই প্রস্তুতি নিতে পারেননি। ই-মেইলে প্রস্তাবনা দেওয়ার সময় সীমা ছিলো ১৯ এপ্রিল। অপরদিকে বাজেট যেহেতু জুনে এরপরও এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবনার জন্য আমরা কয়েকদিন অপেক্ষা করব। কেননা এফবিসিসিআই যেহেতু সব ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সেন্ট্রালবডি। অপরদিকে যদি কারও প্রস্তাবনা বাদও থাকে তবুও আমরা এফবিসিসিআই’র প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব দেবো।’

এদিকে এনববিআর বলছে, আগামী ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেটের মূল ভিত্তি হচ্ছে করোনায় যেসব ক্ষতি হয়েছে সেটি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়। আমরা এটি নিয়েই মূলত কাজ করছি। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন যেন শেষ না হয়ে যায় সেটিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সবগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করছি। অন্যান্য বাজেট আর এবারের বাজেট ভাবনা এক নয়।

সাধারণত অন্যান্য বছর সারাদেশ থেকে দুই শতাধিক সংগঠনের বাজেট প্রস্তাব পায় এনবিআর। গত ১৯ মার্চ থেকে এনবিআর মাসব্যাপী প্রাক–বাজেট আলোচনা শুরু করেছিল। মাত্র দুদিন আলোচনা হওয়ার পর করোনার কারণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়।

শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসের প্রভাব দেশের বাণিজ্যে আঘাত আসার আগেই বেশ মন্দাভাব ছিল রাজস্ব আহরণে। ফলে সরকারের পরিচালন ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সচল রাখতে ব্যাংকঋণ নির্ভরতা বাড়তে থাকে। এ অবস্থার মধ্যেই আসে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ছোবল। বলা যায়, সারাদেশ যখন লকডাউন তখন দেশের অর্থনৈতিকখাত মন্দায় গিয়ে পৌঁছে। সেইসঙ্গে করোনার কারণে আমদানি-রফতানি কমতে থাকায় রাজস্ব আয়ের গতি আরও কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এনবিআর বলছে, ব্যবসায়ীরা ভালো থাকলে রাজস্বের গতি ভালো থাকে। আর ব্যবসায়ীরা খারাপ থাকলে মন্দা থাকে রাজস্ব আহরণে গতি। ফলে এনবিআর এখন একটা খারাপ সময় পার করছে।

এদিকে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এনবিআর ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আদায় করতে পেরেছে। এ হিসাবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৩৭ হাজার ৪৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *