কালো টাকা সাদা করলে ব্যাংক পরিচালক নয়

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

যারা কালো টাকা সাদা করবেন তাদের ব্যাংকের পরিচালক মনোনীত করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব করেছেন অংশীজনরা। একই সঙ্গে তারা ব্যাংকিং, ব্যবসা বাণিজ্য, অর্থনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের পরিচালক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করেন।

এ ছাড়াও জাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের যাতে ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া না হয় সে বিষয়েও জোর দিয়েছেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে মত দিতে গিয়ে অংশীজনরা এসব সুপারিশ করেন।

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশাধনের একটি খসড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়ার জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মত দিয়েছে। এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হলে তারা সব একত্র করে একটি প্রতিবেদন বানিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে দেখা যায়, আইনটি সংশোধনের ওপর অনেকে আকর্ষণীয় মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেটা পূরণের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করলে সুফল পাওয়া যাবে।

বর্তমানে প্রচলিত করের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করলে ব্যাংকের পরিচালক হতে কোনো বাধা নেই। অংশীজনরা বলেছেন, কালো টাকা সাদা করলে তাকে আর পরিচালক হওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা সাদা করে ব্যাংকের পরিচালক হলে তিনি এখানেও দুর্নীতি করতে পারেন।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের টাকার ৯২ শতাংশই আমানতকারীদের। বাকি ৮ শতাংশ পরিচালকদের। ৯২ শতাংশ অর্থের নিরাপত্তা দিতে কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ দরকার। বর্তমানে এতে অনেক শিথিলতা রয়েছে। যে সুযোগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাল জালিয়াতি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের পর্ষদ পেশাদার, অভিজ্ঞ ও সৎ হলে ওই ব্যাংক ভালো চলে। এমন নজির এখনো আছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পর্ষদ গঠনে সতর্ক হতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক সূত্র, আত্মীয়তা বা কোনো কর্মীর যোগ্যতা না থাকলে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ করা যাবে না। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের পরিচালক রয়েছে। বর্তমানে পরিচালক হতে হলে ব্যাংক, ব্যবসা বাণিজ্য বা অর্থনীতি, সামাজিক কল্যাণ যেকোনো একটি বিষয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এতে রাজনীতিবিদরাও ব্যাংকের পরিচালক হতে পারছেন। অংশীজনরা পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা থেকে সামাজিক কল্যাণের বিষয়টি তুলে দিতে সুপারিশ করেছেন। তাহলে ব্যাংকসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলে পরিচালক হওয়া যাবে না। পরিচালক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে এমডিদের মতো তাদেরও পরীক্ষা নেয়ার বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ব্যাংক পরিচালনায় পরিচালকদের নিয়োগ, পারফরম্যান্স, এথিকস, কমপ্লায়েন্স মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। তাহলে পরিচালকদের জবাবদিহিতা বাড়বে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের অপসারণ করতে পারে। সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের অপসারণ করতে পারে না। এসব ব্যাংকের পরিচালকদের অপসারণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করতে পারে। মতামতে সরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের অপসারণের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে আইনের প্রয়োগ সমানভাবে হবে এবং সুশাসনের পথ সুগম হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আমরাও চাই। পর্ষদে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আসুক সেটাই আমরা চাই। পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যাংক পরিচালিত হোক সেটাই আমাদের কামনা। একটি ব্যাংক গড়ে তুলতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সে বিষয়টিও যেন বিবেচনায় নেয়া হয়। এতে বলা হয়, কোনো ধরনের জাল জালিয়াতিতে জড়িত থাকলে ওই ব্যক্তি ব্যাংকের এমডি বা পরিচালক হতে পারবেন না। এ ধরনের অভিযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক প্রমাণিত হলেই তাকে বাদ দেয়া হবে। বর্তমানে জাল জালিয়াতিতে জড়িত থেকেও অনেকে পরিচালক ও এমডি হয়েছেন।

কোনো ব্যাংকে ২০ জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না। বাড়াতে হবে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা। প্রতি পাঁচজনে একজন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমপক্ষে দুইজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে। পাশাপাশি থাকবে আমানতকারীদের মধ্য থেকে পরিচালক। এগুলো নিয়োগ হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে।

বর্তমানে দুই বা তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকে। এদের নিয়োগে বাছাই করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পর্ষদ। ফলে তাদের পছন্দের ব্যক্তিরাই এসব পদে বসেন। যে কারণে তারা আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন না।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, পর্ষদের সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকতে পারবেন, এর মধ্যে ১১ জন হবেন স্বতন্ত্র ও আমানতকারীদের মধ্য থেকে। তাহলে পর্ষদে ভারসাম্য বজায় থাকবে। বর্তমানে উদ্যোক্তা পরিচালকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।

পরিচালকদের নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন এ মর্মে ঘোষণা দিতে হবে। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পর্ষদে কোনো পরিবার এককভাবে ৫ শতাংশ বেশি ভোটাধিকার দিতে পারবে না। বর্তমানে তারা ১০ শতাংশ দিতে পারে।

ব্যাংক পরিচালনার নীতি প্রণয়নে পর্ষদ গঠনেও নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকিং, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এসব বহুবিদ পেশার লোকজনের সমন্বয়ে পর্ষদ গঠন করতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক পরিচালকদের অর্ধেকের বেশি ব্যাংকিং, হিসাববিজ্ঞান, ফাইন্যান্স, অর্থনীতি, কৃষি ও গ্রামীণ অর্র্থনীতি, ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প, আইসিটি এবং অন্যান্য এক বা একাধিক বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদার জ্ঞান ও বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আগে এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালা ছিল না। ফলে পর্ষদে সব পেশার পরিচালক থাকতেন না। সূত্র : যুগান্তর

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *