কিউকম, আলিশা মার্টসহ ১৩ প্রতিষ্ঠান ফেরত দিয়েছে ১৯৩ কোটি টাকা

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা করে গ্রাহকের কয়েক হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিলেও এখন জানা যাচ্ছে- কিউকম, আলিশা মার্টসহ ১৩টি প্রতিষ্ঠান ১৯৩ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। তবে ই-কমার্সের জায়ান্ট কোম্পানি ইভ্যালি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা এক টাকাও ফেরত পাননি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইভ্যালির বিষয়ে যেহেতু মহামান্য আদালত একটি কমিশন গঠন করে দিয়েছে সে কারণে এ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরতের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই। এর বাইরে আইনি জটিলতা নেই এমন ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে আমরা সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সমঝোতার মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ ফেরত দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের ২ আগস্টের তথ্য অনুযায়ী ২১ হাজার ২৮৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহককে ১৯৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বেশি অর্থ ফেরত দিয়েছে কিউকম। প্রতিষ্ঠানটি ১৭ হাজার ১৭৫ জন গ্রাহককে ১৩৯ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে। অর্থ ফেরতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আলিশা মার্ট। এ প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ২১৮ জন গ্রাহককে ৩৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। এরপরই রয়েছে দালাল প্লাস। প্রতিষ্ঠানটি ৯২২ জন গ্রাহককে ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান যে টাকা দিয়েছে সেগুলো কোটি টাকারও কম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে তাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে। কোটি টাকার কম ফেরত দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বুমবুম প্লাস, আনন্দের বাজার, থলে ডট কম, ধামাকা, শ্রেষ্ঠ ডট কম, আলিফ ওয়ার্ল্ড, বাংলাদেশ ডিল, সোফেটিক, ৯৯-গ্লোবাল এবং আদিয়ান মার্ট।

সূত্র জানায়, ৩০ জুনের পর ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়েতে যেসব প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে, শুধু সেসব গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা বন্ধ এবং অর্থ ফেরত দেওয়ার সরকারি উদ্যোগ শুরুর পর প্রায় এক বছর সময় পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তা এসব মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

এছাড়া নিষিদ্ধ এমএলএম ব্যবসা করায় গত সপ্তাহে ছয়টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনও বাতিল করা হয়েছে। অনুমোদন বাতিলকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- থলে ডট কম, গ্লিটার্স আরএসটি ওয়ার্ল্ড, অ্যানেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রোফুড অ্যান্ড কনজ্যুমার লি., আলিফ ওয়ার্ল্ড এবং গ্রিনবাংলা ই-কমার্স লিমিটেড।

এর মধ্যে থলে ডট কম, আলিফ ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠান দুটো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমঝোতার আওতায় গ্রাহকের কিছু টাকা ফেরত দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের প্রধান বলেন, অনুমোদন বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠান দুটোর ওপর নজরদারি আছে। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা চুক্তির আওতায় অর্থ ফেরত না দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানান, সারা দেশে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কী পরিমাণ মামলা হয়েছে, তার একটি তালিকা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা চলতি বছরের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। সে তালিকায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০৫টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রেফতারকৃত কর্মকর্তারা জেলে আছে। এরপরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে সারা দেশে মামলা হয়েছে বলে জানায় ওই সূত্রটি।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা মামলা করেছেন সেগুলো হলো- ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, রিংআইডি, ধামাকা শপিং, গ্লোবাল ই-কমার্স, গ্লোবাল গেইন ই-কমার্স, আনন্দের বাজার, আনন্দবাজার, দালাল প্লাস, অ্যামসবিডি, ফাল্গুনী শপ বিডি, সিরাজগঞ্জ শপ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস, ২৪টিকেটি, নিরাপদ শপ, র‌্যাপিড ক্যাশ-কুইক অনলাইন ই-লোন অ্যাপ, সহজ লাইফ অ্যান্ড লাইভলি লাইফ, এহসান গ্রুপ, থলে ডটকম, আলিফ ওয়ার্ল্ড, মাইক্রো ট্রেড গ্রুপ ডটকম, ডিজাইন ফ্যাশন ও জেকা বাজার।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ই-অরেঞ্জের নামে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রূপপুরে ৪২টি মামলা করেছেন। এরপরই রয়েছে ই-ভ্যালি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ২০টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এ ছাড়া কিউকমের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এক থেকে তিনটি মামলা রয়েছে। সূত্র : বিডি প্রতিদিন

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *