বারবার তাগিত দেয়া শর্তেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্ছতা কাটছে না। বিষয়টি জরুরি হলেও বেশিরভাগ কোম্পানি তা মানছে না। কোম্পানিগুলোতে সুশাষন না থাকায় প্রায়ই আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি ধরা পড়ছে। আর বিএসইসি থেকে তাদের যে শাস্তি দেয়া হচ্ছে সেটাও খুবই সামান্য। ফলে আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আসছে না।
সর্বশেষ শেয়ারবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা বস্ত্র খাতের একটি কোম্পানির প্রতিবেদনে ৫ কোটি টাকা হেরফের দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিষয়টি আসলে নেননি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন শেয়ার বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা আনার বিকল্প নেই। আলাপ করলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিগুলোকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে নিরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে।
বিশ্লষকদের মতে, কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে বিনিয়োগকারীদের চাহিদার প্রতিফলন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবেদন যথাযথভাবে না আসলে কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রাতিষ্ঠানি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে কমিশন। এরই মধ্যে করপোরেট গভর্নেন্স গাইড লাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এই গাইড লাইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর স্বাধীন পরিচালকের সংখ্যা মোট পরিচালকের ২৫ শতাংশ থাকতে হবে।
এছাড়া স্বাধীন পরিচালকদের মধ্য থেকে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। এই গাইডলাইন বাস্তবায়িত হলে কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে বেশিরভাগ কোম্পানি তথ্য প্রকাশে গড়িমশি করে বলেও জানান তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে, কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই সব ধরনের আইনকানুন মানতে হবে। কোম্পানিকে অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তাদের আর্থিক প্রতিবেদন বিস্তারিত ও স্বচ্ছ হতে হবে। কোনো কোম্পানি নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ খুবই জরুরি বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে বিএসইসির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ক্ষেত্রে উদাসিন্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন কেবল শেয়ারবাজারের জন্য প্রয়োজন নয়। আইসিএবি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আরজেএসসি, সংশ্লিষ্ট কোম্পানি, বিভিন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জন্য এটা প্রয়োজন।
আর তাই কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে এ দুটি বিষয় খুবই প্রয়োজন।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এলকে