চাঙ্গাবাজারে নতুন অনিশ্চয়তায় ভারতের বিনিয়োগকারীরা : আনন্দবাজার

sensexস্টকমার্কেট ডেস্ক :

সব নজির ভেঙে বাজার এখন সর্বকালীন উচ্চতায়। নথিবদ্ধ সব শেয়ারের বাজার-মূল্য (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) গত সপ্তাহে ছাড়িয়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সূচক ছোট-বড় মই বেয়ে যত বার উঠেছে, সে তুলনায় সাপের মুখে পড়েছে অনেক কম। বড় সাপের মুখে একবারও পড়েনি বলা চলে। বাজারে যাঁদের আনাগোনা, তাঁদের বেশির ভাগই মনে করছেন, এই জায়গা থেকেও সূচক আরও উঠবে।

এর জেরে ধন্দে পড়েছেন অনেকেই। এত ভাল দাম পাওয়া সত্ত্বেও শেয়ার বিক্রি না-করে আরও বেশি দাম পাওয়ার জন্য রেখে দেব? না কি অনিশ্চিত বাজারে লাভ ফেলে না রেখে, পুরোটা না-হোক কিছুটা তুলে নেব? কে জানে, কোন ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কবে বাজারে আবার ধস নামে। একই সমস্যায় পড়েছেন ইকুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরাও। বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে নেওয়া যাক এই পরিস্থিতিতে কী করলে ভাল হয়:

(১) কোনও শেয়ারই ‘পদ্মভূষণ’ নয় যে, সারা জীবন আগলে রাখতে হবে। শেয়ারে লগ্নি করা হয় লাভের জন্য। সেই লাভ যদি কোনও কালেই ভোগ করা না-হয়, তবে লগ্নি করার অর্থ কী! বাজারের কোনও ঠিক নেই। লাভ এই আছে, এই নেই। অর্থাৎ কেনার তুলনায় কোনও সময়ে যদি অস্বাভাবিক ভাল দাম পাওয়া যায় তবে পুরোটা না-হোক, কিছুটা বিক্রি করে লাভ ঘরে তোলার কথা ভাবাই যেতে পারে। পাকা ফসল বেশি দিন মাঠে ফেলে রাখলে ঝরে যাওয়ার ভয় থাকে। সাবধানী মানুষেরা ঝোপে থাকা দু’টি পাখির থেকে হাতে থাকা একটি পাখি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে ভালবাসেন।

(২) বাজার যতই উঠুক, পরিবেশ যতই অনুকূল হোক, বিক্রির চাপে মাঝেমধ্যে সংশোধন আসবেই। কোনও শেয়ারের প্রতি যদি আপনার অত্যধিক ভালবাসা থাকে, অতি চড়া বাজারে সেই শেয়ারের কিছুটা বিক্রি করে অপেক্ষা করতে পারেন পরের সংশোধনের জন্য। দাম কিছুটা নামলে সেই শেয়ারই কিছুটা কম দামে আবার বাজার থেকে তুলে নিতে পারেন। যে-কোনও শেয়ারের গত ৫২ সপ্তাহের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন দামের দিকে তাকিয়ে দেখুন, হাতে-গোনা কয়েকটি শেয়ার বাদ দিয়ে বেশির ভাগ শেয়ারই গড়ে ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ, কি তারও বেশি ওঠানামা করেছে।

(৩) শেয়ার থেকে নিয়মিত আয় হয় না। বড়জোর বছরে একবার ডিভিডেন্ড পাওয়া যায়। সুতরাং যাঁদের নিয়মিত আয় প্রয়োজন, তাঁরা, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত ও প্রবীণ নাগরিকেরা চড়া বাজারে শেয়ার বিক্রি করে, তা ঋণপত্র-নির্ভর মাসিক আয়/নিয়মিত আয়যুক্ত প্রকল্পে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অদূর ভবিষ্যতে যদি সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এক দিকে যেমন শেয়ার বাজার আরও চাঙ্গা হবে, পাশাপাশি বাড়বে ঋণপত্রের বাজার দরও। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাল বাজারের সুযোগ নিয়ে অনিশ্চিত শেয়ারের দুনিয়া থেকে সরে এসে স্থির আয়যুক্ত প্রকল্পে লগ্নি করে যদি নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করা যায়, তবে মন্দ কী! তবে এক বারে পুরোটা বিক্রি না-করে প্রতিটি উত্থানে অল্প অল্প করে বিক্রি করলে গড় দাম ভাল পাওয়া যায়।

(৪) যাঁদের ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য বেশি, তাঁরা আগামী দিনে বাজার আরও উঠবে এই আশায় লগ্নি ধরে রাখতে পারেন। তবে ধরে রাখুন শুধু ভাল শেয়ার। বর্তমান বাজারে ভাল দাম পেলে অনামী এবং তত ভাল নয় এমন সব শেয়ার বিক্রি করে শুধুমাত্র ভাল শেয়ারে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। দৈনিক ভিত্তিতে নজর রাখুন শেয়ার বাজারের উপর।

(৫) আগামী দিনে সুদ কমলে আগে বাড়বে ব্যাঙ্ক, গৃহঋণ সংস্থা, গাড়ি-নির্মাতা এবং ঋণনির্ভর বড় সংস্থার শেয়ার দর। সে কথা মাথায় রেখে এই ধরনের সংস্থার শেয়ার ধরে রাখা যেতে পারে।
(৬) একই কথা মাথায় রেখে এগোতে পারেন ইকুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীরা। এত ভাল বাজারেও যে-সব ফান্ড তেমন ভাল করছে না, সেগুলি থেকে বেরিয়ে লগ্নি করুন নজরকাড়া সাফল্যের প্রকল্পে। মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ প্রকল্পের আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ এ ধরনের প্রকল্পে লগ্নি ধরে রাখার কথা ভাবতে পারেন। অতি সাধারণ মানুষ ইকুইটি প্রকল্পে লগ্নির একাংশ সরিয়ে নিতে পারেন ঋণপত্র নির্ভর বা ব্যালান্সড ফান্ডে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/তরিকুল/এআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *