পাঁচ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক:

অর্থবছরের মাস বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি। ঘাটতি মেটাতে বকেয়া রাজস্ব আদায়, মনিটরিং বৃদ্ধি, ফাঁকি রোধের মতো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয় এনবিআর। এরপরও ঘাটতির অঙ্ক দুইয়ের ঘরেই থাকছে। নভেম্বর শেষে পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। জাতীয় (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি কাস্টমস খাতে। প্রথমে করোনার দোহাই দেয়া হলেও এখন পুরোদমে চলছে আমদানি-রপ্তানি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি ভ্যাট খাতে। ঘাটতি থাকলেও রাজস্ব আহরণ কিছুটা ভালো আয়কর খাতে। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের যে গতি তাতে রাজস্ব ঘাটতি খুব বেশি হবে না। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাস্তব বিবেচনায় না নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা দেয়ায় ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে।

২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এনবিআরের রাজস্ব আহরণ বিবরণ অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করেছে ৮৭ হাজার ৯২ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ১৯ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় দশমিক ১৯ শতাংশ।

আমদানি-রপ্তানি (কাস্টমস খাতে) পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব ঘাটতি। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ২৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৭১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ঘাটতি রয়েছে ১০ হাজার ৫৪৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে এ খাতে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে এক হাজার ৬২৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কাস্টমস খাতে প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক ২৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে এক দিনের জন্যও কাস্টমস হাউস বন্ধ ছিল না। করোনার মধ্যে প্রথম অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি কম ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিও স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরপরও কাস্টমস খাতে সর্বোচ্চ রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ঘাটতি মেটাতে রাজস্ব ফাঁকি রোধ, দ্রæত পণ্য খালাসে জোর দিয়েছে এনবিআর।

অপরদিকে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতি রয়েছে ভ্যাট (মূসক) খাতে। এ খাতে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৪২ হাজার ৫২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঘাটতি রয়েছে ৯ হাজার ৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে মাত্র ১১ কোটি ৬১ লাখ বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে প্রথম অবস্থায় দোকান, রেস্তোরাঁ, শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে ভ্যাট আদায়ে প্রভাব পড়ে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান খুলেছে। ভ্যাট আদায়ও বাড়ছে। তবে করোনার ধাক্কা এখনও সামলে উঠেনি। বিক্রি কম হচ্ছে। ফলে ভ্যাট আদায়ও কমেছে।

সবচেয়ে কম রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। নভেম্বর পর্যন্ত এ খাতে ৩২ হাজার ১৬৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৯৩৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ছয় হাজার ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা এক অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা বেশি। আর এ খাতে আহরণ প্রবৃদ্ধি চার দশমিক ২২ শতাংশ।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। শেষ সময়ে অনেকেই রিটার্ন ও আয়কর জমা দিচ্ছেন। আর কোম্পানি করদাতারা রিটার্ন ও আয়কর জমা দেয়া শুরু করেছে। করোনার কারণে উৎসে কর আদায়ে প্রভাব পড়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এ খাতে ঘাটতি খুব বেশি হবে না।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে বিপুল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নেয়ায় ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক গতি থাকা সত্তে¡ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে গড়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ হারে। চলতি বছর করোনার প্রভাবে সার্বিকভাবে ব্যবসা ও শিল্পোৎপাদনে গতি নেই। ফলে স্বভাবতই রাজস্ব আদায়ে আগের বছরের মতো গতি নেই। সেই বিবেচনায় আদায়ে প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক। অথচ এবার এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫১ শতাংশ।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কাস্টমস খাতে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি, ভ্যাট খাতে এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি ও আয়কর খাতে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *