প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সমন্বিত ডাটাবেজ গড়ার দাবি

nurulস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

করোনা ভাইরাস মহামারির সময় ক্ষতি মোকাবিলায় শিল্পখাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি সমন্বিত ডাটাবেজ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা।

তারা বলেন, ‘ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায় ছাড় করা ঋণের তথ্য সংযুক্ত করে এ ডাটাবেজ সমৃদ্ধ করা সম্ভব।’ পাশাপাশি তারা কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এ খাতে প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে কোলেটারেল এর বাধ্যবাধকতা রদ করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির পরামর্শ দেন।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সিটিজেন্স প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিস, বাংলাদেশ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘করোনা পরবর্তী কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল নীতি সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা এ দাবি জানান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

এসময় বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭৮ লাখ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) রয়েছে, যার ৯৯ শতাংশ বেসরকারি ভাবে গড়ে ওঠেছে। এসব শিল্প কারখানা জিডিপিতে ২৫ শতাংশ, রপ্তানিতে ৮০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে প্রায় ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের সিএমএসএমই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতের জন্য সরকার বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ৫৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। প্রণোদনার ৯৪ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ছাড় করায় নানাবিধ জটিলতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা দ্রুত প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের জন্য ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কারের দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনার সুযোগ নেই। জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিকল্প উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখার জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্সে ছাড় দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিলের একটি অংশ ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বহন করতে হবে। তারা ব্যাংকগুলোকে সম্পদভিত্তিক অর্থায়নের পরিবর্তে তারল্যভিত্তিক অর্থায়ন, ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় ও অডিট প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাবান্ধব ঋণ কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প উদ্যোক্তাদের সমস্যা মোকাবিলায় একটি সমন্বিত নীতিমালা নেওয়া হবে। এর আলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ’

কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য একটি সমন্বিত সংজ্ঞা নির্ধারণ করার দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশন এ ধরনের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে দেশে প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তার সংখ্যা নির্ধারণ এবং প্রণোদনার অর্থ ছাড় সহজ হবে। তবে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশেষ সহায়তা নিশ্চিত করতে একটি আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারণ ফলপ্রসূ হতে পারে। ’

সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান। এতে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি সৈয়দ আসিফ ইব্রাহীম, অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়ার হালকা প্রকৌশল উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ, নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা চৌধুরী, রংপুর উইম্যান্স চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারা ফেরদৌসি, আইটি উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবির, ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেনসহ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা আলোচনায় অংশ নেন।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *