বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা

bbস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

ব্যাংকিং খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এর আগে এক বছরে কখনও এত বেশি মন্দ ঋণ বাড়েনি। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা—যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে ৫৭টি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। রাইট অফ করা ঋণ খেলাপি ঋণের সঙ্গে যোগ করলে মোট খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাবে। হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা—যা ওই বছরের বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে ছিল ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৪০ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত বছরেই সবচেয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

প্রান্তিকের হিসাব দেখলে সাধারণত, ডিসেম্বর প্রাপ্তিকে আগের প্রান্তিকের চেয়ে খেলাপি ঋণ কমে যায়। গত বছরেও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল জাতীয় নির্বাচন। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের আগে খেলাপিদের থেকে বড় একটা অংশ ঋণ আদায় হয়। অবশ্য গত নির্বাচনের আগে এক শ্রেণির ঋণ খেলাপিদের ব্যাপকহারে ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এরপরও ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ হয়েছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যা ছিল মোট বিতরণ হওয়া ঋণের ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ওই সময়ে ব্যাংকগুলো ৮ লাখ ৬৮ হাজার সাত কোটি টাকা বিতরণ করেছিল। আর রাইট অফ (অবলোপন) করা ঋণ খেলাপি ঋণের সঙ্গে যোগ করলে যা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের চাপ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের অভাবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে সুদের হারও খেলাপি ঋণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি ব্যাংক খাতে সুদের হার কমেছে বলে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা খুব একটা কমেনি। যতটুকু কমেছে তার সুফল নিয়ে গিয়েছে ব্যাংকের উদ্যোক্তারাই। ব্যাংকরে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের মধ্যে যাদের ঋণ অন্য ব্যাংকে আছে তাদের সবার ঋণে সুদহার কমলেও সাধারণ গ্রাহকদের ঋণে সুদহার কমেনি। এসব কারণে লাগামহীন ভাবে বেড়ে চলছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সময় যত যাচ্ছে খেলাপি ঋণের নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের। ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এ সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ এক লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের ২০১৮ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা—যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই সময় তাদের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬০২ কোটি টাকা

অন্যদিকে, খেলাপি ঋণ বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও। ডিসেম্বর শেষে ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অবশ্য আগের প্রান্তিক থেকে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সামান্য কমেছে। আর দেশে পরিচালিত ৯টি বিদেশি মালিকানার ব্যাংকে ২০১৮ শেষে মোট ৩৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বিতরণ করে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা বিতরণ হওয়া ঋণের ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *