বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশি খাটতে হয় : আইএলও

ILOস্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

বাংলাদেশের উৎপাদনশীল খাত অর্থাৎ কলকারখানার ৪৫ শতাংশের বেশি শ্রমিককে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি শ্রম দিতে হয়। প্রতিযোগী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশ কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, মঙ্গোলিয়া ও ভিয়েতনামে এ হার কম।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক–২০১৯’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, উৎপাদনশীল খাতের পাশাপাশি বাংলাদেশের ৩৫ শতাংশের বেশি পরিবহনশ্রমিককে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত শ্রম দিতে হয়। এদিক থেকে ওই ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল মঙ্গোলিয়া।

আইএলওর প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার বিশ্বজুড়ে প্রকাশ করা হয়। এবার এই প্রতিবেদনে শ্রমিকের কর্মসংস্থানের মানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিম্নমানের কর্মসংস্থান বৈশ্বিক শ্রমবাজারের জন্য এখন মূল সমস্যা। বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে ৩৩০ কোটি কর্মরত মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা ছিল না। তাঁরা সমান সুযোগ পাননি। পর্যাপ্ত পণ্য ও সেবা কেনার সক্ষমতাও তাঁদের ছিল না।

আইএলওর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে সংস্থাটির উপমহাপরিচালক ডেবোরাহ গ্রিনফিল্ড বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৮ নম্বর লক্ষ্যে শুধু কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা নয়, মানসম্মত কাজের কথা বলা হয়েছে। সমান সুযোগ ও শোভন কাজ এসডিজি অর্জনের দুটো মূল ভিত্তি।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, একটা কাজ পাওয়া মানেই শোভন জীবনধারণের সুযোগ, অনেক দেশেই বিষয়টি সে রকম নয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিম্নমানের কাজ করে। অনেকেই খুব কম মজুরি পায়। সামাজিক সুরক্ষা বলতে কিছু থাকে না, থাকলেও সেটা নগণ্য। আইএলও জানিয়েছে, ২০১৮ হিসাবে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশে চার ভাগের এক ভাগের বেশি কর্মরত শ্রমিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

আইএলওর প্রতিবেদনে দিনে ৮ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে তাকে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শ্রমিককে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি বলে মজুরি, কর্মঘণ্টা ইত্যাদি নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ থাকে না। দেশের আইনি কাঠামোতেও ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকের মজুরি যেহেতু পর্যাপ্ত নয়, সেহেতু তাঁকে বাড়তি সময় কাজ করে বাড়তি আয় করতে হয়।

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, অতিশ্রমের কারণে শ্রমিকদের অকালেই কর্মক্ষমতা হারাতে দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী শ্রমিক খুব বেশি দেখা যায় না। অবশ্য শ্রম পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। ২০১০ সালে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তার চেয়ে কিছুটা ভালো, যদিও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় আশাব্যঞ্জক নয়।

আইএলওর প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সম্পর্কে বলা হয়েছে, অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বড় অংশের শ্রমিককে কৃষি থেকে শিল্পে নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেটা কাজের মান তেমন একটা বাড়ায়নি। শ্রমিকের বড় অংশই এখনো চাকরির নিরাপত্তা, লিখিত চুক্তি, আয়ের স্থিতিশীলতার অভাবে ভোগেন। সূত্র : প্রথম আলো

স্টকমার্কেটবিডি.কম/বি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *