বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সুইডিশ মন্ত্রীর পরামর্শ

স্টকমার্কেটবিডি ডেস্ক :

বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চান সুইডেনের ব্যবসায়ীরা। তবে তাঁরা চাইছেন, এখানে কারখানাগুলোয় যেন পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হলে সুইডেনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন বলে জানিয়েছেন সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী পার ওলসন ফ্রিড। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর  যাওয়ার আগে প্রথম আলোসহ তিনটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিনিয়োগ বাড়াতে এ দুটি বিষয়ে জোর দিতে বলেন।

ওলসন ফ্রিড বলেন, ‘ঢাকায় আসার আগে সুইডেনের বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার কথা হয়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে তাঁরা দুটি বিষয়ের নিশ্চয়তা চান। প্রথমটি হচ্ছে সুইডেনের ক্রেতারা এমন পণ্য ব্যবহার করতে চান, যা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি দিয়ে উৎপাদিত। তাই ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে, সুইডেনের বিনিয়োগকারী মনে করেন, বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে তাঁরা এখানে বিনিয়োগে আরও উৎসাহিত হবেন।

‘দ্বিতীয়ত, ন্যায্য বাণিজ্য নিশ্চিত করতে সুইডেনের ক্রেতারা পণ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় সামাজিক সংলাপের নিশ্চয়তা চান। অর্থাৎ, পণ্য উৎপাদনে জড়িত শ্রমিকেরা যেন কর্মক্ষেত্রে অধিকার নিশ্চিতের সুযোগ পান, সেটিও দেখতে চান সুইডেনের ক্রেতারা। তাই এ বিষয়টির নিশ্চয়তা পেলে সুইডেনের বিনিয়োগকারী আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।’

সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী মো. সাহাব উদ্দীনের সঙ্গে আলোচনা করেন সুইডিশ মন্ত্রী। দুই দেশ একে অন্যকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে সে বিষয়গুলোও আসে।

ওলসন ফ্রিড বলেন, মানবাধিকারের বিষয়টি প্রত্যেক নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টেকসই বাজার অর্থনীতি আর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও মানবাধিকার অন্যতম পূর্বশর্ত।

বাংলাদেশের সুশাসন ও মানবাধিকারের বিভিন্ন সূচকের বিষয়ে জানতে সফরের আগে ওলসন ফ্রিড ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়েছেন। ওই পরিসংখ্যানগুলোয় বাংলাদেশের সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতাও তার চোখে পড়েছে। তবে সফরে এসে মতবিনিময়ের পর বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের বিকশিত হওয়াটি ধরা পড়েছে তাঁর চোখে।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওলসন ফ্রিড বলেন, ‘নানা রকম ঝুঁকিকে মোকাবিলা করে এখানকার লোকজন যেভাবে এগিয়ে গেছেন, তা থেকে আমি বুঝেছি, তাঁরা নিজেদের আর উত্তরসূরিদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এখানকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নাগরিকদের কারণে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে এ সাফল্য অর্জন করেছে। তবে বাংলাদেশের উত্তরণের পথে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে মধ্য আয়ের অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার পথে বাংলাদেশকে আরও কিছু করতে হবে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, টেকসই বাজার অর্থনীতি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি আর সামাজিক সংলাপের মতো বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা অপরিহার্য।’

উত্তরণের পথে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে সহায়তার বিষয়ে সুইডেনের মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, পুরো দেশ যখন উত্তরণের পথে থাকবে, তখনো কিন্তু কোটি মানুষ দরিদ্র থেকে যেতে পারে। কারণ, সাফল্যের পাশাপাশি ঝুঁকিও কিন্তু থাকে। আর এই বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশের অংশীদার হিসেবে কাজ করে যেতে চায় সুইডেন।’

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ওলসন ফ্রিড বলেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সূত্র : প্রথম আলো

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *