‘বাজার সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে’

du-smbdনিজস্ব প্রতিবেদক :

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেছেন, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দু’টি দুর্যোগ হওয়ার পরও আমরা সে থেকে এখনো শিক্ষা নিতে পারিনি। বাজার সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। উচ্চপর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ মিলনায়তনে শেয়ারবাজার বিষয়ে ৩ মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে সৃষ্ট ধসকে মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই দুটি ধসই এড়ানো যেত। কিন্তু তা করা যায়নি। ২০১০ সালের ধসে শুধু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই নয়, বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজার ধসে বাজার মধ্যস্থকারীদের বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। শেয়ারবাজার যখন চাঙ্গা ছিল তখন অনেক মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে এসেছিল। এখন সে ফান্ডগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। অধিকাংশ ফান্ডের দর এখন অভিহিত মূল্যের নিচে। শুধু তাই নয়, সম্পদমূল্যের নিচেও অবস্থান করছে। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মার্জিন লোনের কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে, এটা সবাই জানে। অথচ তা থেকে উত্তরণে কেউ কোনো কাজ করছে না।

বিএসিইসির সাবেক চেয়ারম্যান আরও বলেন, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দু’টি দুর্যোগ হওয়ার পরও আমরা সে থেকে এখনো শিক্ষা নিতে পারিনি। বাজার সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। উচ্চপর্যায়ের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার সবার জন্য নয়। যাদের বাজার সম্পর্কে মৌলজ্ঞান নেই তাদের এ বাজারে আসা উচিত নয়। আর যদি আসে তাহলে তাদের হাত আগুনে পুড়বেই।

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেয়ারবাজারের বড় ধরনের ভূমিকা থাকলেও আমাদের দেশে তা হয়নি। ৬০ বছরের বেশি সময় পার হলেও দেশের শিল্পায়নে আমাদের শেয়ারবাজারের ভূমিকা এখনো গৌণ। আমাদের দেশের উদ্যোক্তারাও এখন অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। ব্যাংক থেকে খুব সহজেই ঋণ পাওয়া যায় বলে উদ্যোক্তারা সেখান থেকেই ঋণ গ্রহণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অথচ ব্যাংকের অর্থায়ন অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ। পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন সস্তা হলেও উদ্যোক্তারা এখান থেকে তা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর একে আজাদ চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে এক দিনেই সূচকের ৫০০ পয়েন্ট পতন হয়েছিল। এটা অবশ্যই শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয়। সে বিপর্যয়ের পর সরকারের পক্ষ থেকে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরে এসেছে। তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর এ্যাকাউন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ্যাকাউন্টের সঙ্গে বাজারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সম্পর্ক রয়েছে। বাজার সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তারা এখানে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেই। এ জন্য না জেনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন হিসাব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ব্যাংকিং এ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, এ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রশিক্ষণের প্রধান সমন্বয়ক ড. মিজানুর রহমান, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরোমের (সিএমজেএফ) সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *