বিএসইসির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা

courtস্টকমার্কেট ডেস্ক :

মেয়াদোত্তীর্ণ এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিএসইসির করা লিভ টু আপিলের আবেদনে বিবাদী পক্ষে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন দুটি ফান্ডের ইউনিটধারী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

দুটি ফান্ডের ৭ হাজার ৫৮০ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর তিন প্রতিনিধির পক্ষে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদনটি জমা দেওয়া হয়।

আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবি হিসাবে রয়েছেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি; তার সঙ্গে আছেন মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম।

এবিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিএসইসি লিভ টু আপিলের আবেদন করেছে।

“এতে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তিন প্রতিনিধির পক্ষে আবেদন সোমবার জমা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে এবিষয়ে শুনানি হবে।”

এর আগে ১৮ জানুয়ারি এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয় আপিল বিভাগ।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ব্র্যাক ব্যাংক ও বাংলাদেশ জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিআইসি) করা তিনটি আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ আসে।

সেইসঙ্গে তিন আবেদনকারীকে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

এই আবেদনেই বিবাদী পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা, যাদের হাতে অন্তত ৫০০ ইউনিট রয়েছে।

২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক নির্বাহী আদেশে বলা হয়, ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ হবে দশ বছর এবং যেসব ফান্ডের মেয়াদ দশ বছর পেরিয়ে গেছে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এই আদেশের পরও বিএসইসি একাধিকবার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ায়।

এর পর ২০১৪ সালের ২৫ ও ২৬ জুন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর বিধি ৫০ (খ) অনুযায়ী, এইমস ও গ্রামীণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের সভায় ফান্ড দুটির মেয়াদ সবোর্চ্চ অনুরূপ একটি মেয়াদের (১০ বছর) জন্য বর্ধিত করার পক্ষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু ইউনিটহোল্ডারদের সিদ্ধান্ত নাকচ করে বিএসইসি আগের নির্দেশনার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২৯ জুন অনুষ্ঠিত এক সভায় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধে্যে ফান্ড দুটির রূপান্তর/ অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিএসইসির ওই নির্বাহী আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এইমস ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের একজন ইউনিট হোল্ডার আলী জামান গত সেপ্টেম্বরে রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুলসহ বিএসইসির নির্বাহী আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।

রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মেয়াদোত্তীর্ণ ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধে (রূপান্তর/ অবসায়ন) বিএসইসির সিদ্ধান্ত এইমস ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এ আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বিএসইসি চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে।

গত ১৭ ডিসেম্বর অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতিএ এ আবেদন শুনে উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়ে আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।

এর মধে্যে বিএসইসির পক্ষ নিয়ে এইমসের কাস্টডিয়ান ব্র্যাক ব্যাংক ও এমইস মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি বিজিআইসিও আলাদা আবেদন করে।

এই তিন আবেদনের শুনানি করে ১৮ জানুয়ারি হাই কোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

এর ফলে শেয়ারবাজারে এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন চলবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফান্ডের অবসায়নে আপাতত আর কোনো বাধ্যবাধকতা রইল না বলে জানিয়েছেন এইমসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।

এই মামলায় বিএসইসির পক্ষে রয়েছেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী এম এম আমিন উদ্দিন; বিজিআইসির পক্ষে আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী।

আর রিট আবেদনকারীর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।

এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ানের পক্ষে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *