ভারত থেকে আমদানি বন্ধ, পাইকারিতে উর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম

স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

আমদানি বন্ধের ১২ দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে আগে আমদানি হওয়া ও দেশীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

পেঁয়াজ আমদানির আইপি (আমদানি অনুমতি) শেষ হওয়ায় ও নতুন করে আইপি না পাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আমদানি বন্ধের ১২ দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে আগে আমদানি হওয়া ও দেশীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে।

পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য না থাকায় আমদানি বন্ধ থাকলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারলে কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবে।

হিলি স্থল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুনুর রশিদসহ আরো কয়েকজন আমদানিকারক বলেন, আইপি শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ২৯ এপ্রিল থেকে হিলিসহ অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে দেশের বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। একইভাবে বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমায় দেশীয় পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে দেশীয় পেঁয়াজের দামও বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা দামে। গত সপ্তাহের শেষ দিকে বাজারে একই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকার মধ্যে। সেই হিসেবে গত চার দিনে খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-৭ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও আগে আমদানি হওয়া কিছু পেঁয়াজ রয়েছে বাজারে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। এরমধ্যে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ ৩৩-৩৫ টাকা ও বেলে ডাঙ্গা এলাকার পেঁয়াজ ৩০-৩২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এর আগে অর্থাৎ গত সপ্তাহে ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ ২৭-২৮ টাকা এবং বেলেডাঙ্গা পেঁয়াজ ২৫-২৮ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার দর অনুযায়ী, গত তিন-চার দিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের সুযোগ বাজারে আসতে শুরু করেছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ। গত তিন-চার দিন ধরে বাজারে আসা মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ৩১-৩৪ টাকা দামে। যা আমদানির শুরুর দিকে অর্থাৎ গত সপ্তাহের শেষ দিকে ২৯-৩২ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে খাতুনগঞ্জের মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বলেন, দেশীয় পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হয়েছে মাত্র। এই দেশের কৃষকদের কাছে দেশীয় পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। দেশীয় কৃষক যাতে পেঁয়াজের ভালো দর পায় সেই লক্ষ্যে সরকার আপাতত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। এতে বাজারে থাকা পেঁয়াজের দামের আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোকামেই পেঁয়াজের দাম বেশি, আমরা বাড়তি দামে কিনে সে অনুযায়ী বিক্রি করছি।

খাতুনগঞ্জের কাঁচাপণ্যের (পেঁয়াজ, রসুন ও আদা) মার্কেট হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ মিয়া বলেন, দেশীয় কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত করতে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। এখন বাজারে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে তা আগের আমদানি হওয়া পেঁয়াজ। আমদানিকারক ও কৃষকের কাছে পেঁয়াজের যথেষ্ট সরবরাহ থাকায় বাজার অস্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, দেশীয় পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে গেল তিন মাস ধরে (মার্চ-এপ্রিল) চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে কোন পেঁয়াজ আমদানি হয় নি। তবে এর আগে আসা কিছু পেঁয়াজ নিলাম হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তর ও টিসিবির তথ্যমতে, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২-২৩ লাখ মেট্রিকটন। গেল অর্থ বছরে (২০১৯-২০২০) দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ লাখ টন। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে সংগ্রহোত্তর অপচয় হিসেবে ২৫ শতাংশ অপচয় বাদ দিলে ব্যবহার উপযোগী পেঁয়াজ থাকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এদিকে আবাদকৃত পেঁয়াজের প্রায় ২ শতাংশ পরবর্তী বছরের বীজের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সেই হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় ৯-১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তবে আমদানিকৃত পেঁয়াজেও সরবরাহ ও বিপণন পর্যায়ে ৫ শতাংশ অপচয় হয়।

বিগত সময়গুলোতে আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগই আমদানি করা হতো ভারত থেকে। তবে গেল দুই বছর ধরে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে দেশের আমদানিকারকরা।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *