লেনদেনে ‘জেড’ ক্যাটগরির কোম্পানির দৌরাত্ম্য

dseনিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বল্প মূলধনী ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির পর এবার ‘জেড’ ক্যাটগরির কোম্পানির দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে। যেখানে মৌলভিত্তির দিক থেকে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে সেখানে দিনের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে যাচ্ছে মৌলভিত্তির দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ‘জেড’ গ্রুপে লেনদেন হওয়া বেশ কিছু কোম্পানি। গতকাল ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির আটটিই ‘জেড’ গ্রুপের। শেয়ারবাজার বিশ্লষকেরা বলছেন, এ প্রবণতা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করবে।

সাধারণত মন্দা অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক লেনদেন ঘটে থাকে। কোনো কোনো সময় বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি ঝুঁকে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও সক্ষম বিনিয়োগকারীদের একটি অংশই প্রবণতার প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠেন। কারণ মূল্যস্তরের দিক থেকে অনেক ওপরে থাকা এসব কোম্পানির শেয়ার বরাবরই সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোই বিনিয়াগকারীদের আগ্রহ কাড়ে বেশি মাত্রায়। কারণ এসব কোম্পানির মূলধন কম হওয়ায় বাজারে শেয়ারসংখ্যা থাকে সীমিত। এ অবস্থায় সামান্য মূলধন বিনিয়োগ করেই এসব শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে সক্রিয় থাকে বেশ কিছু সিন্ডিকেট যারা বিভিন্ন হাউজের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এসব শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। আবার একপর্যায়ে পরিকল্পিতভাবেই শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসে।

এর বাইরেই গত কিছু দিন থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির পাশাপাশি বছরের পর বছর ধরে ‘জেড’ গ্রুপে পড়ে থাকা কয়েকটি কোম্পানিও সমানতালে দাম বাড়ছে। গত কয়েক দিনেই এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে কয়েক শ’ গুণ।

আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায় গতকাল। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ দশ কোম্পানির আটটিই ছিল ‘জেড’ গ্রুপের। কোনো কারণ ছাড়াই শুধু মন্দা বাজারের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে দ্রুত লাভবান হওয়ার চেষ্টায় এসব শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়ান। সেই সাথে যুক্ত হয় নানা ধরনের গুজব। আর এসব গুজবে প্রভাবিত হয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একপর্যায়ে মূল খেলোয়াড়েরা পরিকল্পিতভাবে মুনাফা তুলে নিয়ে শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসেন। পরে লোকসানের বোঝা টানতে হয় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।

গতকাল ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানি ছিল মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটি ২০০১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে ‘জেড’ গ্রুপে লেনদেন হচ্ছে। গতকাল ১০ শতাংশ দাম বাড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের।

একইভাবে মডার্ন ডাইং ৯.৯৬, ইমাম বাটন ৯.৭৩, সমতা লেদার ৯.৬৩, দুলামিয়া কটন ৯.৫৯, শ্যামপুর সুগার মিলস ৯.৫৯, ঝিলবাংলা সুগার মিলস ৯.৫৫, ও মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের ৮.৮৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।

গতকাল লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিক্রেতার অভাবে লেনদেন বন্ধ ছিল এসব কোম্পানির। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দু’টি শ্যামপুর ও ঝিলবাংলা সুগার মিলস রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প সংস্থার কোম্পানি। গত এক মাসের মধ্যে এ দু’টি কোম্পানির দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ।

বাকি কোম্পানিগুলোর সব ক’টিই বেসরকারি বিভিন্ন খাতের কোম্পানি। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে সবার মধ্যে মিল রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সব ক’টিই প্রথম দুয়েক বছর বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র লভ্যাংশ দিলেও পরে আর্থিক প্রতিবেদনে বছরের পর বছর ধরে লোকসান দেখাচ্ছে। আর শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্য লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করছে।

এ সম্পর্কে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ড. আবু আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, বরাবরই শেয়ারবাজারের মন্দার সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এ ধরনের খেলায় মেতে ওঠেন। এক দিয়ে হাতেগোনা কিছু লোক স্বল্প সময়ে প্রচুর মুনাফা তুলে নিলেও লোকসান গুনতে হয় বেশির ভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর। তা ছাড়া এ ধরনের প্রবণতা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *