সংশোধিত আইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার কমছে

bsecনিজস্ব প্রতিবেদক :

তালিকাভুক্তি আইন সংশোধনীতে উদ্যোক্তার সংজ্ঞা নির্ধারণের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার কমেছে। উদ্যোক্তারা সে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি না করলেও গত এক বছরে প্রায় এক-চতুর্থাংশ কোম্পানিতে উদ্যোক্তা অংশের শেয়ার কমেছে। স্টক এক্সচেঞ্জ উপস্থাপিত উপাত্ত পর্যালোচনায় এ চিত্র উঠে আসে।

মূলত তালিকাভুক্তি বিধিমালার সংশোধনীতে উদ্যোক্তা শেয়ারের সংজ্ঞাগত পরিবর্তনের কারণেই শেয়ার ধারণে এ পরিবর্তন এসেছে। ২০১৫ সালের ১২ জুলাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি বিধিমালা সংশোধন করা হয়। সেখানেই প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়।

নতুন সংজ্ঞা অনুসারে কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড কিংবা সামষ্টিক বিনিয়োগ স্কিমের প্রারম্ভিক মূলধন জোগানদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই শুধু উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবে।

কোম্পানির প্রারম্ভিক মূলধনদাতা ব্যক্তি বা উদ্যোক্তা মারা গেলে অথবা অন্য কোন কারণে তার শেয়ার নিকটাত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করলে সে শেয়ার আর উদ্যোক্তা শেয়ার হিসেবে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে কেউ উদ্যোক্তার শেয়ার পেলেও তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শেয়ার সাধারণ শেয়ার হিসেবে গণ্য হবে এবং তা বিক্রিতে কোন পূর্বঘোষণার প্রয়োজন হবে না।

এদিকে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির যেসব শেয়ারহোল্ডার এ কারণে উদ্যোক্তা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাদের শেয়ার এখন লকড-ইন (বিক্রয় কিংবা হস্তান্তর নিষেধাজ্ঞা) থাকবে কিনা, সে বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংজ্ঞাগত পরিবর্তনের কারণে তালিকাভুক্ত অন্তত ৬৫টি কোম্পানির উদ্যোক্তা অংশের শেয়ার কমে গেছে। কিছু উদ্যোক্তা বাদ পড়ায় কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ধারণকৃত শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু ও পুনঃগণপ্রস্তাবের (আরপিও) যোগ্যতা হারিয়েছে।

উদ্যোক্তার বর্তমান সংজ্ঞা নির্ধারণের পর স্কয়ার ফার্মা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, শাহজিবাজার পাওয়ার, একমি ল্যাবরেটরিজ, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, আরএন স্পিনিং মিলস, ফারইস্ট ফিন্যান্স, মতিন স্পিনিং মিলস, জিবিবি পাওয়ার, লিবরা ইনফিউশন্স, বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকস, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারধারণের পরিমাণ কমে গেছে। এর মধ্যে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, আফতাব অটো, এ্যাপোলো ইস্পাত, বারাকা পাওয়ার, ফ্যামিলিটেক্স, জেনারেশন নেক্সট, মিথুন নিটিং, তাল্লু স্পিনিং ও পিপলস ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এতে কোম্পানিগুলো রাইট শেয়ার ও আরপিওর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর সুযোগ হারিয়েছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তা পরিচালদের সম্মিলিত শেয়ারের পরিমাণ ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ থেকে ২৮ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালের ৩০ জুন স্কয়ার ফার্মার উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ছিল ৫৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্তি বিধিমালা সংশোধনের পর বর্তমানে এ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার নেমে এসেছে ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশে।

সদ্যতালিকাভুক্ত একমি ল্যাবরেটরিজের আইপিও প্রসপেক্টাসে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার দেখানো হয় ৫৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই মাস শেষে তাদের শেয়ার নেমে এসেছে ৩৮ দশমিক ৮৮ শতাংশে। একই সময়ে বেঙ্গল উইন্ডসর কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ৬২ দশমিক ৫২ শতাংশ থেকে ৩২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।

ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ৭৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৩২ শতাংশ, গোল্ডেন সান ৪৮ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে ৪১ দশমিক ৮৯ শতাংশে, মতিন স্পিনিং ৬৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ থেকে ৩২ দশমিক ৭২ শতাংশে, আরএন স্পিনিং ৬২ দশমিক ২১ থেকে ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশে এবং লিবরা ইনফিউশন্সের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ৪৮ দশমিক ২৮ থেকে ৩৪ দশমিক ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে।

এর বাইরে একই কারণে জাহিন স্পিনিং মিলস, নর্দার্ন জুট, ফারইস্ট নিটিং ও সেন্ট্রাল ফার্মার উদ্যোক্তা অংশের শেয়ারও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ফারইস্ট ফিন্যান্স, ফার্স্ট ফিন্যান্স, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, ডেল্টা লাইফ, এক্সিম ব্যাংক, আইএলএফএসএল, নিটল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, পপুলার লাইফ, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ারের পরিমাণও কমেছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/বিএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *