নিজস্ব প্রতিবেদক :
যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংযোগ নেই ও সংকট চলছে, সেখানে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসই (এলপিজি) ভরসা। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়ছে। ফলে বিদেশিদের পাশাপাশি দেশি ব্যবসায়ীরাও এ ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন। বেক্সিমকো, ওরিয়ন, নাভানা নতুন করে এলপিজি ব্যবসায় নামছে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কাভিত্তিক লাফ্স গ্যাস বাংলাদেশ গ্রাহকদের নিরাপদ সিলিন্ডার দিতে দেশেই সিলিন্ডার কারখানা করার পরিকল্পনা করছে। আরও নানামুখী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান এলপিজি ব্যবসার অনুমোদন পেলেও বাজারে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি। ব্যবসার বড় অংশই বসুন্ধরা গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। এরপরই রয়েছে বিএম, যমুনা, লাফ্স, ওমেরা, টোটাল ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। এ খাতের উদ্যোক্তারা গঠন করেছেন এলপিজি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর বর্তমান চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস ৭৭ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি বিক্রি করেছে; যা পুরো বাজারের বিক্রির ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। যমুনা এলপিজি বিক্রি করেছে ৬৭ হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন বা ২০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, বিএম এনার্জি ৪৮ হাজার ৮২৮ মেট্রিক টন বা ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া ওমেরা পেট্রোলিয়াম বিক্রি করেছে ৪৩ হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন বা ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ, লাফ্স গ্যাস বিক্রি করেছে ৪১ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন বা ১৩ শতাংশ, টোটাল গ্যাস বিক্রি করেছে ৩৫ হাজার ৮০০ টন বা ১১ দশমিক ১ শতাংশ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিক্রি করেছে ৯ হাজার ৪৯৩ মেট্রিক টন বা ২ দশমিক ৯ শতাংশ। দেশে এখন ২৩টি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছে। আরও ১৬টি টার্মিনাল নির্মাণ-প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। এ ছাড়া সিলিন্ডারে গ্যাস ভরতে নির্মাণ হয়েছে ৪৩টি প্ল্যান্ট।
এদিকে, দেশে এলপিজি সিলিন্ডার ও ট্যাংকার উৎপাদনেও নতুন বিনিয়োগ আসছে। গত বছরে বিভিন্ন খাতের ১৬টি কোম্পানি মিলে এ জন্য ‘স্টার কনসোর্টিয়াম লিমিডেট’ নামের একটি কনসোর্টিয়াম বা জোট গঠন করে। এর প্রধান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ৯৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সিলিন্ডার ও ট্যাংকার উৎপাদনের কারখানা করবে এই জোট। তারা এলপিজি সিলিন্ডার ও ট্যাংকার নির্মাণে সহায়তা নেওয়ার জন্য ইরানের সারভিগ্যাস কোম্পানির সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করেছে। এর সদস্যরা হলো পেডরোলো এন কে হোল্ডিংস, ক্রাউন গ্রুপ অ্যান্ড জিপিএইচ ইস্পাত, ইউনিক-বোরাক গ্রুপ, নিটল-নিলয় গ্রুপ, ক্রাউন স্টিল, ইন্টিগ্রেটেড ল্যান্ড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন, ক্যাথারিস ডেভেলপমেন্ট, ইনসেপ্টা ফার্মা, মহসিন টি হোল্ডিংস, উইলশেয়ার, ইলেকট্রো মার্ট, রেস ম্যানেজমেন্ট, সাদ মূসা গ্রুপ, দাতো এবিডি নূর হোল্ডিংস এসডিএন বিএইচডি ও জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাফ্স গ্যাসও বাংলাদেশে সিলিন্ডার কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিলক ডি সিলভা ১৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কায় লাফ্স হোল্ডিংয়ের প্রধান কার্যালয়ে বলেন, গ্রাহকদের নিরাপদ সিলিন্ডার দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সব মানুষের সঙ্গে কাজ করতে আরও নানা পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় ৪০টি সুপার স্টোর রয়েছে। বাংলাদেশেও একই পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, চারটি দেশে লাফ্স গ্যাসের কার্যক্রম চলছে। মালদ্বীপেও যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তিলক ডি সিলভা বলেন, বাংলাদেশের মোংলার প্ল্যান্টে উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। এ জন্য শুধু বাংলাদেশের জন্যই একটি বড় জাহাজ কেনা হয়েছে। যার মাধ্যমে সহজেই মোংলায় প্ল্যান্টে কাঁচামাল সরবরাহ করা যায়।
১৯৯৫ সালে পরিবহনে গ্যাস রূপান্তর ব্যবসার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় লাফ্স গ্রুপের। ২০১৫ সালে পেট্রিডেকের পুরোটাই কিনে নেয় লাফ্স গ্যাস বাংলাদেশ। এরপরই বাংলাদেশের বাজারে মনোযোগ বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পেট্রিডেক এলপিজির পেট্রিগ্যাসই মূলত বর্তমানে লাফ্স গ্যাস। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের খুলনা, যশোর, রাজশাহী ও ঢাকায় এলপি গ্যাস স্টেশন রয়েছে লাফ্স গ্যাসের। এসব স্টেশন থেকে পরিবহনে এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এফ