বিশেষ প্রতিবেদক :
ভ্যাট বাবদ সরকারের রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে বিভিন্ন খাতের ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাট প্রদানে সেরা করদাতার পুরস্কারও পাচ্ছে তারা। শীর্ষ করদাতা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই আবার আছে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ। এদের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি), গ্রামীণফোন ও তিতাস গ্যাসের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে এনবিআর। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে আবার পাওনা চেয়ে দাবিনামা পাঠানো হয়েছে।
এনবিআরের নজরদারির কারণেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকির এ চিত্র উঠে আসছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগর জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, সঠিকভাবে রাজস্ব প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ প্রণোদনা ও করখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। মামলায় আটকে থাকা রাজস্ব আদায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ভবিষ্যতে ফাঁকি রোধেও মাঠপর্যায়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এনবিআর থেকে সব পর্যায়েই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের তথ্যমতে, ভ্যাট খাতে এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।
তামাক খাতের প্রতিষ্ঠান বিএটিবির কাছে এনবিআর পাওনা দাবি করেছে ২ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত মিথ্যা মূল্য ঘোষণায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ ১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ তুলে মামলা করে এনবিআর। এ দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে কোম্পানির পক্ষে রিট করা হলেও সরকারের পক্ষে রায় আসে। তবে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবার আপিল বিভাগে আবেদন করেছে কোম্পানিটি। আগামী ৫ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠলেও একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভ্যাট বাবদ সরকারের কোষাগারে রাজস্ব জমায় শীর্ষে রয়েছে বিএটিবি। সর্বশেষ অর্থবছরে এনবিআরকে ১৩ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানটি, যা এ খাতে আহরিত রাজস্বের ২০ শতাংশের বেশি।
ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ সরকারের কোষাগারে রাজস্ব প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম গ্রামীণফোন লিমিটেড। ২০১৬-১৭ অর্থবছরও দেশের শীর্ষ সেলফোন অপারেটরটি এ বাবদ ২ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা সরকারের কাষাগারে জমা দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে ২ হাজার ২ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ।
রাজস্ব প্রদানে শীর্ষ তালিকায় থাকার পাশাপাশি ফাঁকির অভিযোগেও শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিরতণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে ভ্যাট খাতে মোট রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ৫ নম্বরে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে গ্যাস বিতরণে পেট্রোবাংলার বকেয়ার বাইরে প্রতিষ্ঠানটি আরো হাজার কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে অভিযোগ এনবিআরের।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ