স্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :
মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টরের কাঠামোগত বা আইনগত কোনো সমস্যা নেই। আসল সমস্যা শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদি মন্দা। যাতে মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর ভালো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
শনিবার (১০ অক্টোবর) এএএমসিএমএফ ‘শেয়ারবাজার ও দেশের অর্থনীতিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। আর সভাপতিত্ব করেন এএএমসিএমএফের সভাপতি ড. হাসান ইমাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাফিজ আল তারিক। অনুষ্ঠান মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন অরুনাষ্ণু দত্ত।
সভাপতির বক্তব্যে এএএমসিএমএফের সভাপতি ড. হাসান ইমাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের ইমেজ সংকট আছে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। এই সেক্টর নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় নীতি নির্ধারক ও ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য দেখি। বেশিরভাগ মন্তব্যই নেতিবাচক। কোনোটার পেছনে যুক্তি আছে, কোনটা ভিত্তিহীন। এই নেতিবাচক মন্তব্য মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টর সর্ম্পকে বিরূপ ধারণা তৈরি করেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। যা ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
তিনি আরো বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কাঠামোগত সমস্যা আছে বলে সম্প্রতি একজন মন্তব্য করেছেন। অথচ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোনো সমস্যা নাই। বাংলাদেশ এবং ভারত, আমেরিকা ও ইউরোপের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামোতে কোনো পার্থক্য নেই। বরং ভারত ও আমেরিকা থেকে আমাদের ট্রাস্টি রুলস অনেক কঠিন।
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আইনে বড় সমস্যা, নীতি নির্ধারকদের দ্রুত বড় ধরনের সংস্কার করা প্রয়োজন। আসলে আমাদের দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনে বড় কোনো সমস্যাও নেই এবং বড় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নেই। এটা আন্তর্জাতিক বেস্ট প্রাকটিস ফলো করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ড. হাসান ইমাম বলেন, কাঠামো ঠিক থাকা সত্ত্বেও ভুল ধারণার কারণে এই সেক্টরকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে শেয়ার হিসেবে ভুল ধারণা থেকে বেশ কিছু ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
এই ফান্ডের ইউনিট দর সম্পদ বিবেচনায় হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের বাজারে আরেকটি দর নির্ধারণ হয়। যাতে করে ১০ টাকার সম্পদের একটি ইউনিট ৪ টাকায়ও লেনদেন হয়। অথচ ওই ইউনিটের সম্পদ ১০ টাকাই রয়েছে। তারপরেও দরপতনের কারণে অনেকের ধারণা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, শেয়ারের মতো ইউনিটে বিনিয়োগও ঝুঁকি আছে। এখন কেউ যদি ঝুঁকি মুক্ত মনে করে বিনিয়োগের মাধ্যমে লোকসানে পড়েন, তখন মনে করেন এর জন্য অন্য কেউ দায়ী। মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে লভ্যাংশ নিয়েও ভুল ধারণা আছে বলে জানান তিনি।
এই ফান্ড মূলত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে। কাজেই তার লভ্যাংশ সক্ষমতা আসে শেয়ারবাজার থেকে। এই বাজার ভালো না করলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য লভ্যাংশ দেওয়া কঠিন। এটাই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইমেজ সংকটের প্রধান কারণ।
এখন মার্কেট যদি ভালো হয় অবশ্যই মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো রিটার্ন দেবে বলে জানান হাসান ইমাম। তিনি বলেন, জুন মাসে আমাদের ফান্ডগুলোর ইউনিট প্রতি সম্পদ ১০ টাকার নিচে ৭ টাকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবগুলো ১১ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং কয়েক মাসেই ৪% থেকে ৫% লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ফেরত পেয়েছে। বাজার ভালো থাকলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ডিভিডেন্ড দিতে পারবে ভালো।
অনুষ্ঠানে কমিশনার ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি। যদিও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা অন্যদেশের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী ছিল। কিন্তু নানা সুযোগ থাকলেও দেশের ফান্ড ম্যানেজাররা বিনিয়োগের ক্ষেত্রের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। তবে আগামি ৫ বছরের মধ্যে এই খাতটি শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ডে পরিণত হবে।
ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলো ২০০১ সালের একটি আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিদ্যমান আইনে ফান্ড ম্যানেজারদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ওই আইনে ৪০ শতাংশ তালিকাভুক্ত কম্পানি, ৩০ শতাংশ ডিবেঞ্চারসহ অন্যান্য পণ্য এবং বাকি ৩০ শতাংশ অ-তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল। শিক্ষিত বিনিয়োগকারী হিসেবে ফান্ড ম্যানেজাররা মাকের্টের গতিবিধি বুঝতে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে পারেনি। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ফান্ডগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা কাঙ্ক্ষিত লভ্যাংশ পায়নি। ফান্ডগুলো মার্কেটকেও গতিশীল করতে ব্যর্থ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দাবস্থার কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ ও এনএভিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারণ বেশিরভাগ ফান্ডেরই তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ার কেনা রয়েছে। এই কম্পানির দর বাড়া-কমার কারণেই এনএভি কমেছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/বি