কারসাজির শাস্তি দিয়েও শেয়ার দর বৃদ্ধি থামছে না

bsecস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

কারসাজির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরও শেয়ারবাজারে বিডি অটোকারস ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের দামের বড় উত্থান ঘটেছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার বিডি অটোকারসের দাম ২৮ টাকা বা পৌনে ৯ শতাংশ এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দাম প্রায় ৫ টাকা বা সোয়া ২ শতাংশ বেড়েছে। এমনকি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ৫-এ ছিল।

কোম্পানি দুটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির কারণে চার ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সভায় জরিমানার এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া কোম্পানি দুটির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে সহায়তা করায় কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজকে সতর্ক করা হয়। পাশাপাশি বিডি অটোকারস ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারকে নগদ লেনদেনের বাজার তথা স্পট মার্কেট থেকে মূল বাজারে স্থানান্তর করা হয় গতকাল। আর তাতে এদিন কোম্পানি দুটির শেয়ারের দামের বড় উত্থান ঘটে।

কোম্পানি দুটির শেয়ারের কারসাজির জন্য চার ব্যক্তি ও তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলেও তাদের হাতে এখনো কোম্পানিটির শেয়ার রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করেনি বিএসইসি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি এসব কারসাজিকারীর হাতে শেয়ার থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেগুলোর বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। অন্যথায় তারা নতুন করে আবারও কারসাজি করে কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাবে। এতে করে জরিমানার অর্থ তারা কারসাজি করেই তুলে আনতে পারবে।

বিএসইসি জানিয়েছে, কারসাজির মাধ্যমে বিডি অটোকারস ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটিয়েছে আবদুল কাউয়ুম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, মইনুল হক খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, মাহফুজ আলম এবং আজিমুল ইসলাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। উল্লিখিত ব্যক্তিরা নিজ নামে, পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের নামে এ কারসাজির ঘটনা ঘটান। এ কারণে বিএসইসি আবদুল কাউয়ুম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ও আজিমুল ইসলাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ২ কোটি টাকা করে ৪ কোটি টাকা, মাহফুজ আলমকে ১ কোটি এবং মইনুল হক খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এঁরা সকলেই কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের মাধ্যমে এ কারসাজির ঘটনা ঘটান। বিএসইসি বলেছে, কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি দুটির শেয়ার লেনদেনে যথাযথ তদারক না করে পরোক্ষভাবে কারসাজিতে সহায়তা করেছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যার মাধ্যমে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরা বলছেন, যিনি অপরাধ করেছেন এবং যিনি তাতে সহায়তা করেছেন, উভয়ই একই দোষে দুষ্ট। কিন্তু একজনকে জরিমানা করা হলেও অন্যজনকে শুধু সতর্ক করা হয়েছে।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, যাঁরা সরাসরি কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবদুল কাউয়ুম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস, মইনুল হক খান অ্যাসোসিয়েটস কারসাজির মাধ্যমে বিডি অটোকারসের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটান। মাহফুজ আলম কারসাজি করেন লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার নিয়ে। আর আজিমুল ইসলাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস দুই কোম্পানির শেয়ারের কারসাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। আজিমুল ইসলাম শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বাবা, মা, স্ত্রী ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে এ কারসাজিতে অংশ নেন।

এদিকে, বিএসইসির সিদ্ধান্তে কোম্পানি দুটিকে গতকাল স্পট মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরিয়ে আনা হয়। এতে গতকাল সকাল থেকেই কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/জেড/বি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *