ভারতের শেয়ারবাজারে সুযোগ এসেছে নতুন বিনিয়োগ করা : আনন্দবাজার

sensexস্টকমার্কেট ডেস্ক :

ওঠা-পড়াই জগতের নিয়ম। যা ওঠে তা পড়ে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির এই তত্ত্ব ভীষণ রকম খাটে শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রেও। বাজার অতি অল্প সময়ে অনেকটাই বেশি উঠেছিল। ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ওঠা বাজারের ডগাটা ভেঙেছে গত সপ্তাহে। এতটা ওঠার পরে একটা সংশোধন যে হবে, তা প্রত্যাশিত ছিল। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করা হচ্ছিল কী কারণে হয়, সেটা দেখার জন্য। এবং গুটিকতক কারণ পাওয়া মাত্রই সূচক নেমেছে ব্যাখ্যা করেছে দেশের একটি পত্রিকা। এ বারের সংশোধনের কারণগুলি পত্রিকাটি বলছে :

• আশু সুদ কমার আশা ক্ষীণ হওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং দেশে পণমূল্য বেশ খানিকটা কমে আসায় আশা ছিল এ বার সুদ কমতে পারে। কিন্তু কমেনি। শুধু তাই নয়, সুদ যে অদূর ভবিষ্যতে কমতে পারে, সে সম্পর্কেও কোনও আশার বাণী শোনাননি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্ণধার রঘুরাম রাজন।

• নারায়ণমূর্তি-সহ ইনফোসিস-এর চার জন প্রতিষ্ঠাতা একই সঙ্গে গত সোমবার এই অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ২.৮ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করায় আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাজারে। এর প্রভাবে শুধু ইনফোসিসই নয়, বড় পতন হয় বহু শেয়ারের। সোমবার সেনসেক্স পড়ে ৩৩৮ অঙ্ক। আগের দু’মাসের মধ্যে এটি সব থেকে বড় পতন। একটি কাজের দিনে কোনও সংস্থার প্রতিষ্ঠাতারা ৬৫০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন, এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। এই আতঙ্ক থেকে ইনফোসিস এখনও পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি।

• চিনের অর্থনীতিতে মন্থরতার খবরও বাজারকে দুর্বল করে তোলে। এই খবরে ভারত-সহ বিশ্বের অনেক বাজারকে কম- বেশি পড়তে দেখা যায়।

• সরকারের দেওয়া বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি এবং সেগুলিকে ঘিরে আশার উপর ভর করে বাজার এতটা উপরে উঠেছে। এখন বাজার কাজ দেখতে চায়। যতক্ষণ প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়িত না-হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কারণে অকারণে সংশোধন হবে।

সেনসেক্স ২৮ হাজার ভেঙেছে। ২৭ হাজারও যে এই ধাক্কায় ভাঙবে না তা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বাজারে কিন্তু ভাল এবং মন্দ দু’রকমের খবরেরই প্রবাহ আছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলিকে।

১) খুচরো পণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার নভেম্বরে নেমে এসেছে ৪.৩৮ শতাংশে যা অক্টোবরে ছিল ৫.৫২ শতাংশ। খবরটা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। পাশাপাশি, আর একটা ভাল খবর হল, নভেম্বরে খাদ্যপণ্যমূল্য বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে মাত্র ৩.১৪ শতাংশে। শীতে সব্জি এবং ফলের দাম কমাই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই দুই সূচকের পতন সুদ কমানোর ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নতুন করে ভাবাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

২) আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম আরও নেমেছে। এর প্রভাব ভারতীয় অর্থনীতির উপর বিশাল। এতে শুধু সরকারই নয়, উপকৃত হচ্ছে পেট্রোপণ্য নির্ভর বেশ কিছু সংস্থা।

৩) একটু একটু করে ডলারের দাম অনেকটাই বেড়ে উঠেছে। শুক্রবার প্রতি ডলারের দাম পৌঁছেছে ৬২.২৯ টাকায়। তেলের দাম কমায় যতটা সুবিধা হতে পারত, তার কিছুটা শুষে নেবে ডলারের এই ঊর্ধ্বগতি।

৪) আশঙ্কাজনক ভাবে অক্টোবরে কমেছে শিল্পোৎপাদন। বাড়া তো দূরের কথা, তা সরাসরি কমেছে ৪.২ শতাংশ, যা গত দু’বছরের মধ্যে সব থেকে খারাপ। সেপ্টেম্বরে তা বেড়েছিল ২.৮ শতাংশ। এই সব পরিসংখ্যান থেকে সন্দেহ জাগছে জাতীয় উৎপাদন অভীষ্ট জায়গায় পৌঁছতে পারবে কি না।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বিরাট কোনও আশা জাগাচ্ছে না। সবাই তাকিয়ে আছে এই পরিস্থিতিতে সরকার কোন কোন আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়িত করতে সফল হয় এবং বাজেট কেমন হয়, তার দিকে। সুদের হার কমা ছাড়া বাজেটের আগে এমন আর কোনও ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই, যার উপরে ভর করে বাজার তেড়েফুঁড়ে উঠতে পারে।

এই কলমে এর আগে আমরা আলোচনা করেছি বাজার অস্বাভাবিক তেতে উঠলে কিছু শেয়ার বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলে নেওয়া ভাল। পরে বাজার পড়লে একই শেয়ার আবার কম দামে কিনে নেওয়া যেতে পারে। যাঁরা এই পরামর্শ কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা আজ অবশ্যই খুশি। বাজার গত সপ্তাহে অনেকটাই পড়েছে। আবার সুযোগ এসেছে নতুন করে বিনিয়োগ করা।

সূত্র- আনন্দবাজার

স্টকমার্কেটবিডি.কম/তরি/এএআর

কমিশন-হার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএসই

dse1নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের নতুন সফটওয়্যার চালুর তৃতীয় দিনেও চূড়ান্ত হয়নি লাগা ও হাওলা কমিশনের নতুন হার। নতুন সফটওয়্যারে ১টি করেও শেয়ার কেনা-বেচা করা যায়। কিন্তু এর জন্যও আগের বেঁধে দেওয়া হারে হাওলা ও লাগা চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এই কমিশন নির্ধারণে একটি বোর্ড সভায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)।

হাওলা ও লাগা চার্জ পুনঃনির্ধারণে সোমবার ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ বৈঠকে বসলেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ট্রেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ হার পুনঃনির্ধারণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, তিন দিনের লেনদেন চিত্র পর্যবেক্ষণ যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় প্রযোজন। এ ছাড়া এ বিষয়ে ট্রেকহোল্ডারদের ভিন্নমত রয়েছে। ডিএসই বোর্ডের একক সিদ্ধান্তে বাজারে যাতে প্রভাব না পড়ে সে লক্ষ্যেই ট্রেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউসগুলো প্রতি হাওলা লেনদেনের জন্য ডিএসইকে ২ টাকা হাওলা চার্জ দিয়ে থাকে। আর ১০ পয়সা করে লাগা চার্জ দেওয়া হয়। হাওলা চার্জের বিপরীতে টাকার অঙ্কে মোট লেনদেনের উপর হাউসভেদে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শতকরা ৩৫ থেকে ৫০ পয়সা কমিশন নেওয়া হয়। নতুন পদ্ধতিতে ১টি শেয়ার লেনদেনের বেলায়ও ডিএসইকে ২ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

আর ১টি শেয়ার লেনদেনের জন্য হাওলা, লাগা (সর্বমোট লেনদেনের উপর প্রদেয় কমিশন) ও এটিআই (আগাম কর) চার্জ বাবদ হাউসের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩ টাকা। ফলে একটি শেয়ার লেনদেন হলে বেশি কমিশন আদায় করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, নতুন স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থায় মার্কেট লট (শেয়ারগুচ্ছ) না থাকায় হাওলা, লাগা ও কমিশনের চার্জ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই।

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এএআর