নিজস্ব প্রতিবেদক :
দফায় দফায় সময়সীমা বেঁধে দিয়েও সরকারি কোম্পানির শেয়ার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে খুব একটা সাড়া মেলেনি। এ কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানিরও ভালো শেয়ার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর আগে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বাজার ধস এবং মন্দায় বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে অগ্রগতি হয়নি। তবে বাজার আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ারবাজারে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১৪ মে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সরকারি কোম্পানিসহ বাংলাদেশে ব্যবসা করা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে কীভাবে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
জানা গেছে, সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বিভিন্ন কোম্পানিকে শেয়ার অফলোড সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে শেয়ারবাজারে শেয়ার বিক্রির বিষয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছে কিনা কিংবা কোন পর্যায়ে আছে কোম্পানিগুলোকে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে আমি একটি বৈঠক করতে চাই।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সরকারি ৩৪ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সে সময় ওই উদ্যোগ বেশি দূর এগোয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বাজারে ভালো শেয়ারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। এরপর সংকট কাটাতে সরকারি কোম্পানিকে বাজারে আনার উদ্যোগ শুরু হয়। ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে সরকারি কোম্পানির ৫১ শতাংশ শেয়ার সরকারের হাতে রেখে বাকি শেয়ার পাবলিকের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন কোম্পানিগুলোকে ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেয়ার ছাড়তে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আরেকটি বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ছাড়ার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশনার প্রতিফলন দেখা যায়নি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসি এ বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যেসব বিদেশি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়; তাদের নগদ লভ্যাংশের ওপর বর্ধিত কর হার আরোপ করা যেতে পারে। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন সনদ নিতে হয়। এ নিবন্ধনের সময় শর্তারোপ করে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার শর্তারোপ করা যেতে পারে।
জানা গেছে, ঢাকার শেয়ারবাজারে ২৯৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১১টি বহুজাতিক কোম্পানি। যা বাজার মূলধনের মাত্র ৭ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে প্রায় ৪১টি বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই ব্যবসা করছে। শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএ