স্টকমার্কেট ডেস্ক :
এশিয়ার শেয়ারবাজার গতকাল সোমবারও ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছে। খবর এএফপি।
ব্রেক্সিট গণভোটের পরে সৃষ্ট ভীতি দূর করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতির সর্বশেষ তথ্যও ইতিবাচক ছবি তুলে ধরেছে। বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ এতে আরো বেড়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে উদ্বেগের কিছু কারণ এখনো রয়ে গেছে। ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিচ্ছেদের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি নাজুক থাকবে।
টোকিও শেয়ারবাজার সূচক গতকাল দুপুর পর্যন্ত শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। হংকং শেয়ারবাজার বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। সাংহাই শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ ও সিউল শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
একইভাবে সিডনি শেয়ারবাজার সূচক বেড়েছে ৩ শতাংশ। সদ্যসমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কা সৃষ্টি সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা সতর্কভাবে এগিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় এখনো ভোট গণনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল বেরোতে আরো কয়েক দিন লাগবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হলে পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। এর জের ধরে অস্ট্রেলিয়াকে সর্বোচ্চ এএএ ঋণমান হারাতে হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার গত সপ্তাহে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। জাপান সরকারও তাদের প্রণোদনা কর্মসূচি জোরদার করবে বলে লেনদেনকারীরা আশা করছেন। এছাড়া চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনাও অনেকটা উবে গেছে।
এশিয়ার শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্টদের আস্থা বাড়াতে এসব খবরের পাশাপাশি সর্বশেষ সংযোজন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) গভর্নর মার্ক কার্নির বক্তব্য। ব্রিটেনের মুদ্রানীতি আবার শিথিল হতে পারে বলে গত মঙ্গলবার তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা তার কথায় সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা দেখছেন।
সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ রিচার্ড জেরাম বলেছেন, সার্বিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্রেক্সিটের প্রভাব সীমিত থাকবে। ব্রেক্সিটের যন্ত্রণার বেশির ভাগ ব্রিটেনকে এবং কিছু অংশ ইউরোপের অন্যান্য দেশকে ভুগতে হবে।
সিঙ্গাপুরের কেজিআই ফ্রেজার সিকিউরিটিজের নিকোলাস তাও ব্লুমবার্গকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাড়তি তারল্যের সম্ভাবনা বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারকে শান্ত করেছে। তবে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে।
কেজিআই ফ্রেজার সিকিউরিটিজের বাজার-কৌশল প্রণেতা নিকোলাস তাও বলেন, মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলার যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, তা উদীয়মান বাজারের জন্য ভালো নয়। চীনের অর্থনীতি এখনো মন্থর, মার্কিন অর্থনীতি সেরে উঠতে পারেনি এবং যুক্তরাজ্য-ইইউ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াও স্পষ্ট হয়নি। কাজেই অনিশ্চয়তা সহজে কমবে না।
অনিশ্চয়তার মেঘ যেমনই হোক, এশিয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা গতকাল থলে হাতে বেরোতে দ্বিধা করেননি। গ্রিনিচ মান সময় সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টোকিওর নিক্কেই শেয়ার সূচক দিনের লেনদেন শুরুর সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছিল। একই সময় পর্যন্ত হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ২ দশমিক ১ শতাংশ, সাংহাই কম্পোজিট শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি এএসএক্স শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
এশিয়ার বাইরের বাজারগুলোতেও আস্থার ছাপ দেখা গেছে। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা পর্যন্ত লন্ডনে এফটিএসই সূচক ১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছিল। আগের দিনের লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত নিউইয়র্কে ডাও জোনস শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়েছিল।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম