নিজস্ব প্রতিবেদক :
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে ২০১৫ সালে ১১ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই পিছিয়ে পড়ার পেছনে দুটি বিষয়কে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে সরকারের সহযোগিতা কমে যাওয়া ও গ্রাহক তথ্য সংগ্রহে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা।
সরকারের সহযোগিতা কমে যাওয়ার সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে পেয়েছে ২২, ২০১৪ সালে এ সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৫৬। আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতার বিষয়টিও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
এমন তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘গ্লোবাল মাইক্রোস্কোপ ২০১৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে মুঠোফোন ও ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক আর্থিক লেনদেন ব্যবহারকারী উন্নয়নশীল ৫১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৪০, ২০১৪ সালে যা ছিল ২৯।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো এক বছরে কতটুকু এগোল বা পেছাল সেটির ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার এ বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০১৫ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সাক্ষাৎকার ও গবেষণার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে ১২টি সূচককে বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সহায়তা, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সক্ষমতা, ঋণ ও আমানত ব্যবস্থাপনা, অর্থ লেনদেনকারী এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণসহ সমগ্র আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সবগুলো বিষয়কে যোগ করে ১০০ নম্বরের মধ্যে একটি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে ৩৭টি দেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আর অবনতি ঘটেছে নয়টি দেশের। পিছিয়ে পড়া নয়টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ১২টি সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে পেয়েছে ৩৯ পয়েন্ট। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৫। একই সময়ে বাংলাদেশ ১১ ধাপ পিছিয়ে ২৯ নম্বর থেকে ৪০ নম্বরে নেমে গেছে।
অবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও এসব সেবা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম জ্ঞান অর্জনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে যথাযথ সেবা চালুর বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের বিমা সুবিধার আওতায় আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ আগের মতোই এগোচ্ছে। কৃষি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ, নতুন হিসাব খোলা সবকিছুতেই আমরা ভালো করছি। স্কুল ব্যাংকিংয়ের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছি। তবে প্রবৃদ্ধি আগের মতো না-ও হতে পারে।’
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ৮০ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে।
স্টকমার্কেটবিডি.কম/এম/এ