রডের দাম যৌক্তিক রাখতে সরকার ব্যবস্থা নেবে

rodস্টকমার্কেটবিডি প্রতিবেদক :

রডের দাম বৃদ্ধি ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন উৎপাদক ও ব্যবহারকারীরা। উৎপাদকরা বলছেন, যেটুকু দাম বাড়ানো প্রয়োজন, এর চেয়ে কম বেড়েছে। আবার ব্যবহারকারীরা বলছেন, যেটুকু বাড়া উচিত, এর চেয়ে বেশি বাড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছেন উৎপাদকরা। তবে প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে এর একটি সুরাহা করার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রডের বাজার অস্থির হয়ে ওঠার কারণ জানতে গতকাল রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উৎপাদক ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ সময় উৎপাদকরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, বন্দরে পণ্য খালাসে অতিরিক্ত খরচ, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দামের প্রভাব, ব্যাংকঋণের সুদ বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণেই রডের দাম বেড়েছে।

তবে ব্যবহারকরীরা বলেন, উৎপাদকরা স্থানীয় বাজারে ফিনিশড প্রডাক্টের দাম যে পরিমাণে বাড়িয়েছেন, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ততটা বাড়েনি। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রকল্পে বাস্তবায়নের কারণে রডের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে সুযোগ নিচ্ছেন উৎপাদকরা।

সভা শেষে রড-সিমেন্টের দাম কেন বাড়ছে বা প্রকৃতপক্ষে কত দাম হওয়া উচিত, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে দাম কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকলে সেটাও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ জন্য দ্রুত এ দুই পক্ষের প্রতিনিধিসহ অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রীকে নিয়ে সভা করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। এসব পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। ব্যবসায়ীরা যাতে লোকসানে না পড়ে, আবার উৎপাদকদের শিল্প যাতে বাঁচে সবাইকে নিয়ে সে রকম ব্যবস্থা করা হবে।’

এ সভায় বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামালের দাম বেড়েছে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। আবার বিদেশ থেকে পণ্য এনে বন্দরে ঠিকমতো খালাস করা যাচ্ছে না। অফ ডকে খালাস করতে প্রতি টনে ৬৮৮ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পণ্য বহণ করা যাবে না, এমন সিদ্ধান্তের কারণে পরিবহনে খরচ বেড়েছে এক হাজার ৪৮৮ টাকা।

বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতির কারণে এক হাজার টাকা টন প্রতি খরচ বাড়ছে। ব্যাংকের সুদ বাবদ প্রতি টনে ৭০০ টাকা খরচ বেড়েছে। ডলারের বিনিময় মূল্যের কারণেও খরচ বেড়েছে। সর্বসাকল্যে প্রতি টন রড উৎপাদনে ১৮ হাজার ৪১৯ টাকা খরচ বেড়েছে। ফলে রডের খুচরা মূল্য যা হওয়া উচিত তার চেয়ে কমই দাম বেড়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকঋণের সুদহার, পরিবহন খরচ, বন্দর সমস্যা—এগুলোর সমস্যা আমাদেরও। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে পারে। তবে সে বৃদ্ধি অনুযায়ী রডের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারে। কিন্তু দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। দেশে রড-সিমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। উৎপাদকরা তার সুযোগ নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। কারণ যারা টেন্ডারে অংশ নিয়েছে তারা কাজ না করে ১০ শতাংশ জরিমানা দেবে, কিন্তু ২০ শতাংশ লোকসান দেবে না। সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।’

স্টকমার্কেটবিডি.কম/এমএম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *