যে ৫টি মৌলিক বিষয় শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীর জানা উচিত

sbগনেশ মোদক :

কেউ-ই চান না আপনার অর্থ লোকসান দিতে। অধিকন্তু মূল্যবান কিছু হারানোর যন্ত্রণা অন্য কোনো মূল্যহীন কিছু হারােনার চেয়ে নি:সন্দেহে অনেক বেশি। যদি আপনি শেয়ারবাজারে কোনো বিনিয়োগ করার বিষয় বিবেচনা করেন এবং এর লোকসানের চিন্তা আপনাকে হতাশ করে, তাহলে অবশ্যই এখাতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তই আপনার সঠিক হবে না। যাহোক এ কথা বাদ দিন, যখন আপনি বিনিয়োগ করবেন আপনার উচিত কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া। যা আপনার লাভবান হওয়ার সুযোগ বাড়াবে। এক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের মৌলিক সূচকগুলো কিভাবে কাজ করে এই প্রবন্ধ আপনাকে সাহায্য করবে। এবং কেন বাজার প্রতিক্রিয়া করলে আপনি এতে সাড়া দেন। এর জন্য আমরা আলোচনা করবো শেয়ারবাজারের পঞ্চ বেদ নিয়ে যা প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর জানা উচিত। সূত্র : ফোর্বস ম্যাগাজিন।

১. শেয়ারবাজার কি ?

শেয়ারবাজার একটি জটিল পদ্ধতি যেখানে সর্বজনীনভাবে লেনদেনকৃত কোম্পানিগুলোর শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয় করা হয়। এটি কিছুটা কুয়াশাচ্ছন্ন, অন্ধকার অতল জায়গা যেখানে মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য ব্যবসা করে। তবে সত্যিকার অর্থে এটি আদৌ জুয়া খেলার মতো নয়। কেন তা নয়, যদি লাভ বা লোকসান দুটির একটি হতে পারে এমন খাতে আপনি ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলেন। লাভবান হলে বড় বিনিয়োগ করার পুঁজি পাবেন। আর লোকসান হলে পুরো প্রায় ১ লাখ টাকা হারাতে পারেন। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে আপনি ২০ বা ৩০ হাজার টাকা লাভ বা লোকসান দিবেন। কিন্তু খুবই কম ক্ষেত্রেই পুরোটা টাকার লোকসান ঘটে। যদি না আপনি তল্পিতল্পনাহীন কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করেন। তাহলে বলতে আপনি পারেন শেয়ারবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে একে অন্যের বিরুদ্ধে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়।

২. শেয়ারবাজার লেনদেনের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি

শেয়ারবাজার লাখো লাখো বিনিয়োগকারীর সমষ্টি। যারা গতিশীল বিরোধাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেন। কারণ এক বিনিয়োগকারী একটি সুনির্দিষ্ট শেয়ার বিক্রয় করলে অন্য কেউ এটি অবশ্যই কিনতে ইচ্ছা পোষণ করবেন। এক্ষেত্রে উভয় বিনিয়োগকারীই সঠিক নয়। এ জন্য এটি একটি দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি। সংক্ষেপে বলা যায়, এখানে একজন বিনিয়োগকারী লাভবান হবেন। আরেকজন লোকসানের শিকার হবেন। সুতরাং আপনি বিনিয়োগের কথা চিন্তা করলে এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞ হওয়া দরকার।

৩. কেন শেয়ার দর ওঠানামা করে?

শেয়ার দর কেন ওঠে অথবা নামে এর জন্য অনেক কারণ আছে। এদের মধ্যে রয়েছে সংবাদমাধ্যম, অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের মতামত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঝুঁকি, সরবরাহ ও চাহিদা, এবং অসংখ্য বা উপযুক্ত বিকল্পের অভাব। এসব কারণের সমন্বয়, সকল প্রাসঙ্গিক তথ্যের বিস্তৃতি বিশেষ ধরনের (ঊর্ধ্বমুখি ও নিম্নগামী) মনোভাব বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি করে। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা বেশি হলে শেয়ার দর কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিপরীতভাবে, বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা বেশি হলে শেয়ার দর কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

৪. কেন শেয়ারবাজার সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা এত কঠিন ?

ধরা যায়, কয়েকবছর যাবৎ শেয়ারদর বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারলেন যে, একটি সংশোধন আসবে এবং শেয়ার দর কমবে। আমরা বুঝতে পারি না যে কি কারণে শেয়ার দর বাড়ে অথবা কেন এটি ঘটে। সেজন্য কিছু বিনিয়োগকারী সুযোগের অপেক্ষায় ব্রোকারেজ হাউজে বসে থাকে। এটি কাজে লাগানোর জন্য। এই বিষয় আপনার মনে কিছু মৌলিক প্রশ্নের উদয় ঘটায়। আপনি সাইডলাইনে বসে থেকে কিভাবে বুঝবেন সুযোগ কখন আসবে। ইতিমধ্যে আপনি শেয়ার ক্রয় করলে কিভাবে বুঝবেন কখন তা বিক্রয় করবেন। শেয়ারবাজার নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা গেলে এসব প্রশ্নের উত্তর সহজে দেয়া যেত। যাহোক, প্রকৃতঅর্থে একজন বিনিয়োগকারীকে তিনটি ইস্যু বিবেচনা করতে হবে। প্রথমটি হলো বোঝেন কোন বিষয়টির মাধ্যমে শেয়ার দর ন্যায্যভাবে মূল্যায়ন করা হয়। দ্বিতীয়টি হলো কোন ঘটনা দর কমায় এবং শেষেরটি হলো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালাে বোঝাপড়া অর্জন করুন।

ক. শেয়ার মূল্যায়ন

শেয়ারের প্রকৃত দরকে ন্যায্য মূল্যের সাথে তুলনা করুন। উদারণস্বরূপ ৩০ টাকায় লেনদেন হলে এর ন্যায্য মূল্য ৩৫ টাকায় বিপরীতভাবে, ৩০ টাকায় লেনদেন হলে এর ন্যায্য মুল্য ২৫ টাকা। এই ধরনের অতিমূল্যায়ন বর্জন করা দরকার। এসব বাদ দিয়ে কোম্পানির সম্পদ মূল্য, ব্যালান্সশিট, অবচয় ও দায় বিতারণ সমন্বয় করুন। আরো করতে পারেন কোম্পানির বর্তমান মূল্য ভবিষ্যতে কেমন লাভ দেবে।

খ. মূল ঘটনা

এই ঘটনা জানা কঠিন ইট ভবনের প্রতিটি দিক পর্যবেক্ষণ করার মতো রিহার্সেল প্রবণতা। এটুকুই কি যথেষ্ট নয় ?

গ. সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া

বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একটি পক্ষ শেয়ার বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। আরেকটি পক্ষ ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার। যাহোক, আপনার পক্ষে সবকিছু জানা অসম্ভভব। তবে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই কারণে আমরা মাঝেমধ্যে সনাতনী ধ্যাণ-ধারণা বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এসব কাজে লাগাতে পারবেন যদি আপনার সবচেয়ে সেরা বিশ্লেষক বিনিয়োগকারী হোন।

৫. কখন কেনাবেচার উত্তম সময়

কেনার সময় আপনার মনে রাখা উচিত দর বাড়ার পর নয়, দর কমার পর কেনা ভালো। এতে প্রচুর লাভ পাবার সম্ভবনা থাকে। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ কোনো কোম্পানির দর ৩০ বা ৪০ শতাংশের বেশি কমল। চিন্তা করুন কেন দর কমল। উত্তর খুঁজুন একখাতের অন্য কোম্পানির দর কমেছে কিনা। ? এটা চরম মাত্রায় কিনা? পুরো বাজারে কি ধস পড়েছে? যদি বাজারের বড় অংশ বা অন্য খাতের কোম্পানিগুলো তুলনামূলকভাবে লাভবান থাকে। তাহলে আপনার বোঝা উচিত ওই সুনির্দিষ্ট কোম্পানির সমস্যা আছে। শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে কেনাবেচা করুন ও লেগে থাকুন। বিনিয়োগ মূল্যায়নের জনক বেঞ্জামিন গ্রাহাম বলেছেন, পরিচিত কোম্পানির ক্রেতা নিজেকে সান্ত্বনা দেন যে, তিনি এমন শেয়ার ক্রয় করছেন না যখন স্থিতিশীল সীমা সুনিশ্চিতভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পরিচিত শেয়ার মূল্যের আর্দশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

সারাংশ

শেয়ারবাজার জটিল জায়গা যেখান নবীনরা সহজে খাপখাওয়ে নিতে পারেন না। এজন্য আপনারা গুজবে কান দেবেন না। বিনিয়োগ করার সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে রেখে বিনিয়োগ করুন। তা না পারলে আপনি একজন দক্ষ বিনিয়োগকারীকে খুঁজে বের করুন যাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন এবং তার নির্দেশনা অাপনি মেনে চলবেন। এটি আপাতত দৃষ্টিতে অপব্যয় মনে হলেও বিশ্বাস রাখুন আপনি একা লোকসান দেয়ার চেয়ে এটা অনেকটা ফলদায়ক।

স্টকমার্কেট ডেস্ক/শুভ/মোদক.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *